রংপুর প্রতিনিধি:
ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মোহাম্মদ মজিবর রহমান মাস্টার আর নেই। তিনি শনিবার সকালে রংপুর নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন।
বদরগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মলিহা খানম তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
মজিবর রহমান মাস্টার ১৯৩৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সেরাজ উদ্দিন ও মায়ের নাম আলিমন নেছা।
১৯৪৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় মহান ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন মজিবর রহমান। ১৯৫২ সালে দশম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার সময় শ্যামপুর হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
১৯৭১ সালে গঠিত বদরগঞ্জের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১ এপ্রিল সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের নেতৃত্বে তিন শতাধিক আনসার, পুলিশ ও সেনাসদস্য বদরগঞ্জে আসেন। তিনি ওই বহরে অংশ নেন। তারপর বদরগঞ্জ থেকে তারা দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে যান। সেখানে তাদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তিনি নীলফামারীর চিলাহাটির তিনটি স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করেন। তার নির্দেশে মজিবর রহমান ভারতের কুচবিহারের টাপুরহাট যুব ক্যাম্পে সহকারী রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে যোগ দেন।
মজিবর রহমান মাস্টার ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বদরগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়াও কয়েক বছর বিসিআইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্কাউটস আন্দোলনে যুক্ত থেকে রাষ্ট্রপতি পদকও লাভ করেন তিনি।
ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক-২০২৩ পান রংপুরের কৃতী সন্তান ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মজিবর রহমান মাস্টার।
মজিবর রহমান মাস্টারের দুই ছেলে মোস্তাফিজার রহমান মজনু ও মোস্তাকুর রহমান। তারা পেশায় শিক্ষক ও প্রকৌশলী। মেয়ে মোনসেফা খানম গৃহিণী।
তার মৃত্যুতে রংপুরের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।