Monday, April 21, 2025
Homeজাতীয়দুদক দুর্নীতি করে এটা মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না: দুদক চেয়ারম্যান

দুদক দুর্নীতি করে এটা মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না: দুদক চেয়ারম্যান

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

মো. নাঈম শাহ্, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন,“অনেক সময় আমাকে শুনতে হয়, আপনারা দুর্নীতির কথা বলেন, কিন্তু আপনার নিজের অফিসে তো দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেবার মতো না। আমি এটি মোটেই উড়িয়ে দেই না। আমরা যে দুর্নীতি করি সেটাও আপনারা আমাদের দেখিয়ে দেবেন এবং আমরা চেষ্টা করব যতটা সম্ভব এই দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে। কারণ আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন যদি দুর্নীতি করে তখন তো আর বাকিদের বলার কিছু থাকে না।”

‘সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রোববার (২০ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে ৪টা বিকেল পর্যন্ত নীলফামারী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রংপুর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন,“বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আমার ধারণা নীলফামারীতে দুর্নীতির প্রকোপ কম। কিন্তু আমি ঢাকার অবস্থা যেটা দেখি সেটা বেশ বেশি। যেখানে যেখানে প্রকোপ কম সেটাকে একটা মডেল জেলা হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব। আমি আশা করব একটা সময় আপনারা নিজেরাই ঘোষণা করবেন নীলফামারী হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা।”

দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন,“আমাদের মধ্যে এখন যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা, আমরা নিজেরা দুর্নীতিকে ঘৃণা করি কি না? আমাদের দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ যদি টাকা পয়সা থাকে, যদি আমাদের দাওয়াত করে খাওয়াতে পারে, তাহলে খুব সন্তুষ্ট থাকি তাদের ওপরে। আমরা যদি এই দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের একটু ঘৃণা করতে না পারি তাহলে কিন্তু এই সংকটটা খুব সহজে যাবে না। যেটা আপনারাই শুরু করুন যে ঠিক আছে আমরা দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলবো।”

দুর্নীতি রুখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবহেলা রয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন,“ আমাদের যে কাজগুলো, এগুলো কিন্তু ব্যক্তিগত কাজ না। প্রাতিষ্ঠানিক কাজ। প্রতিষ্ঠান যদি ঠিকমতো কাজ করে। তাহলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেনো আসবে? প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান পর্যন্ত হচ্ছে শেষ দোষ। তারপরও আইনগত কিছু বিষয় আছে যেগুলো অনেক সময় আদালতে চলে যায়। এটা ছাড়া আমি তো মনে করি, আজকে যে অভিযোগটি আমাদের কাছে এসেছে, এর দুয়েকটা ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ এখানে আসার কোনো কারণ ছিল না। আমি বিশ্বাস করি, আমরা কর্মকর্তাবৃন্দ যারা সেবা দাতা বলে নিজেদের দাবি করি। আসলে জনগণের অর্থে আমাদের বেতন হয়, আমরা বড় চেয়ারে বসি, ভালো পোশাক পড়ি। আমাদের সেই কমিটমেন্ট থাকা দরকার। সেই প্রতিশ্রুতি থাকা দরকার। আমরা যেন তাদের (জনগণের) ঋণ শোধ করতে পারি।”

ভবিষ্যতে দুর্নীতি বন্ধ করার কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন,“ আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মনে করেন, আমাদের যে কর্মপদ্ধতি, এটার মধ্যে খানিকটা ভ্রান্তি আছে। সেটা হচ্ছে আমরা যে সময় ব্যয় করি, মোট সময়টা পুরোনো দুর্নীতিকে কীভাবে নিরসন করা যায় তার পিছনে। আসলে আমাদের বড় কাজ হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয় সেটা রোধ করা। কোথায় দুর্নীতি হয় আমি, আপনি আমরা সবাই জানি। যদি জেনেই থাকি তাহলে ভবিষ্যতের দুর্নীতি ঠেকাবার জন্য এখন থেকেই যদি আমরা সতর্ক থাকি তাহলে কি দুর্নীতি দূর হবে না?”

যুবশক্তি দেশকে রক্ষা করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন,“বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভাল দিক যেটা হচ্ছে, আমাদের এই যে যুবশক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী যুবশক্তি এটা প্রমাণ করেছে, এই যুবশক্তি দেশ স্বাধীন করেছে। এই যুব শক্তির হাতেই বাকি আগস্টে অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটবে। যুবশক্তি যদি ঠিকভাবে কাজ করে, সতর্ক থাকে, তারা আবার নিজেরা যদি চাঁদাবাজির মধ্যে ঢুকে যায় তাহলে খুব মুশকিল। তারা যদি সতর্ক থাকে, বাংলাদেশে তারাই হবে শ্রেষ্ঠ প্রহরী। বাংলাদেশকে তারাই রক্ষা করবে আমাদের।”

গণশুনানীতে ৮১টি অভিযোগের মধ্যে দুইটি আদালতে রয়েছে, কয়েকটি অপ্রাসঙ্গিক ও ৫৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আতাউল গনি ওসমানীকে পঞ্চপুকুর শাহ পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী বোরহান উদ্দিন বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ইএফটি ও এফপিও সংশোধনের জন্য অর্থ আদায়ের অভিযোগে তাকেও অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এতে নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবর আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মো. তালেবুর রহমান। এসময় জেলার বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সংস্থার অভিযুক্ত ব্যক্তি ও অভিযোগকারীদের মুখোমুখি করা হয় গণশুনানিতে। এ সময় অভিযুক্তদের অনেকের উপস্থিতিতেই এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ লিখিতভাবে এই ৮১টি অভিযোগ উপস্থাপন করেন। সেই সাথে সেবা বঞ্চিত জনসাধারণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর