দিনাজপুর প্রতিনিধি: ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা। জুলাই বিপ্লবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের আগে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে হাসিল করেছেন ব্যক্তি স্বার্থ। স্বৈরাচারের বিদায়ের সাথে সাথে অবস্থা বুঝে বনে যান বিএনপির নেতা। আর পথের বাধা দূর করতে বিএনপির দলীয় ব্যানারে মিছিল বের করে নিজেকে হাইলাইট করতে তাতে ককটেল হামলার নাটক সাজিয়ে বনে যাওয়ার যান জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক বাহক হিসেবে। আলোচিত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা শাহাদৎ আলী সাহাজুল।
ফুলবাড়ীর বিএনপিতে অনুপ্রবেশ নিজের ঘটিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি, রীতিমতো পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদটিও কবজা করে নিয়েছেন। তার যোগদানের পর থেকেই বিএনপিতে শুরু হয়েছে আভ্যন্তরীণ কোন্দল, নানা গ্রুপে বিভক্তি। সাহাজুল ও তার সাবেক জাপা সহযোগীদের দাপটে বিএনপির মূলধারার নেতাকর্মীরাসহ ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। নব্য বিএনপি খ্যাত সাহাজুল ও তার দাপুটে সহযোগীরা বেপরোয়া চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে মেতে উঠেছে তারা। পুলিশ প্রশাসনের নীরবতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করারও উপায় নেই। অনেক ক্ষেত্রেই বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মী সমর্থকেরাও চরম হুমকির মুখে তটস্থ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। পথের বাধা দূর করতে বিরুদ্ধে থানায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় আসামি বানিয়ে পুলিশকে ব্যবহার করে চরম হয়রানির ধকলে ফেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এজাহারে হয়রানিমূলক জুড়ে দেওয়া নাম বাদ দিতে দাবি করা দাবি করা হচ্ছে মোটা টাকা
স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পাটির সাবেক ওই নেতাশাহাদৎ আলী সাহাজুল এখন বিএনপির ফুলবাড়ী পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক। জাতীয় পাটি থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর দলের জেলা কমিটির কতিপয় নেতাতে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক ও পরে সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন বলে দলের পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতাদের অভিযোগ। গত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শুরু করেছে চাঁদাবাজি দখলবাজি। সাহাজুল ও তার বাহিনীর তাণ্ডবে এখন চাঁদাবাজি দখলবাজিসহ ত্রাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে ফুলবাড়ী উপজেলা। শুধু তাই নয় সাহাজুল বাহিনীর চাঁদাবাজির হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিএনপি ঘরানার মানুসহ ছাত্রদলের সাবেক নেতা-কর্মীরাও। সাহাজুলকে চাঁদা না দেয়ায় বিষ্ফোরক মামলার আসামি হয়ে ঘরছাড়া হয়ে পড়েছে বিএনপির কর্মীসহ ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও অরাজনৈতিক ব্যবসায়ী, সংখ্যালঘু জনগণ এবং শিক্ষককেরাও। সাহাজুলের দেয়া মিথ্যা মামলা ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহসও পায়না।
জানা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘায়েলের পাশাপাশি মামলায় জড়িয়ে নাস্তানাবুদ করতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়ী থানায় দায়েরকৃত বিষ্ফোরক মামলার আসামি করা হয়েছে বিএনপির কর্মি ও পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাকারিয়ার ছেলে আনোয়ারুল হককে, একই (বিষ্ফোরক) মামলার আসামি করা হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক নেতা বর্তমানে সরকারি চাকুরিজীবী গোলাম কিবরিয়া, সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নজিবর রহমান, বিএম ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ সালেহ আহম্মেদ তুহিন ও অরাজনৈতিক ব্যবসায়ী মাসুদ রানাকে।
ভুক্তভোগী হামিদপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাকারিয়ার ছেলে আনোয়ারুল হক অভিযোগ করে বলেন শাহাদৎ আলী সাহাজুলের সহযোগী ও পার্বতীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম খলিলের ভাই নুর আলম নুরুল্লার সাথে বিরোধ থাকায় তাকে এই বিষ্ফোরক মামলার আসামি করা হয়েছে। একইভাবে ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমানে সরকারি চাকুরিজীবী গোলাম কিবরিয়া, নজিবর রহমান ও অধ্যক্ষ সালেহ আহম্মেদ তুহিন বলেন সাহাজুলের সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে তাদেরকে বিষ্ফোরক মামলার আসামি করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, সাহাজুলের ছোট ভাই মানিক মণ্ডলের বিপক্ষে ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় অরাজনৈতিক ব্যবসায়ী মাসুদ রানাকে বিষ্ফোরক মামলার আসামি করা হয়েছে।
সাহাজুলের দেয়া বিষ্ফোরক মামলার আসামি বিএনপি কর্মী আনোয়ারুল জানান, তার পিতা জাকারিয়া ১৯৯১ সাল থেকে হামিদপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার স্ত্রী মাসুমা বেগম হামিদপুর ইউনিয়ন মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কেবলমাত্র সাহাজুলের গ্যাং সদস্য পার্বতীপুর আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম খলিলের ভাই নুর আলম নুরুল্লার সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে তাকে বিষ্ফোরক মামলার আসামি করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মামলা দায়েরের সময় তার নিকট এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল সাহাজুল ও মামলার বাদি শাহেদ ইসলাম। কিন্তু তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাকে আসামি করা হয়েছে। ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমানে সরকারি চাকুরিজীবী গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ করে বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ৫ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করে সাহাজুল। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায়, তাকে বিষ্ফোরক মামলার আসামি করা হয়েছে।সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে সাহাজুল তার বিশ্বস্ত অনুসারী যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহেদ ইসলামকে বাদি করে একটি বিষ্ফোরক মামলা দায়ের করে চাঁদাবাজি শুরু করে। চাঁদার টাকা না দিলে গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী থানার ইনচার্জ একেএম খন্দকার মহিব্বুল জানান, আসামি যাকেই করা হোক মামলা তদন্ত করে তবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অযথা কারো আতঙ্কের কারণ নেই।