আজঃ রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ -এ ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ - ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭
  • আজ রংপুরের আবহাওয়া
• কাউনিয়ায় নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা • কাউনিয়ায় সমবায়ীদের গাভী পালন রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষনের উদ্বোধন • রংপুর কারাগারে বন্দী কাউনিয়ার ব্যবসায়ীর হাসপাতালে মৃত্যু • ভুরুঙ্গামারীতে নবাগত ইউএনও'র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত • সৎ নেতৃত্ব থাকলে দেশের করুন অবস্থা হত না : এ টি এম আজহারুল ইসলাম • কাউনিয়ায় নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা • কাউনিয়ায় সমবায়ীদের গাভী পালন রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষনের উদ্বোধন • রংপুর কারাগারে বন্দী কাউনিয়ার ব্যবসায়ীর হাসপাতালে মৃত্যু • ভুরুঙ্গামারীতে নবাগত ইউএনও'র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত • সৎ নেতৃত্ব থাকলে দেশের করুন অবস্থা হত না : এ টি এম আজহারুল ইসলাম

ডিসেম্বরে বদলে যাওয়া বেরোবি: কুয়াশা, কোলাহল আর ক্যাম্পাস-জীবনের নীরব গল্প

Nuclear Fusion Closer to Becoming a Reality6

মাসফিকুল হাসান

মাসফিকুল হাসান , বেরোবি , ক্যাম্পাস প্রতিনিধিঃ

আপডেটঃ 7 ডিসেম্বর, 2025

ডিসেম্বরের প্রথম ভোর। উত্তরবঙ্গের শীত যে কতটা কামড় বসাতে পারে, তা বোঝা যায় বেরোবি ক্যাম্পাসে পা রাখলেই। পুরো ক্যাম্পাস যেন এক অদৃশ্য কুয়াশার চাদরে মোড়া—প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, ভিসি মাঠ, হল মাঠ, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ—সবকিছু ধীরে ধীরে অস্পষ্ট থেকে স্পষ্ট হতে থাকে সূর্যের প্রথম আলোয়।

শীতের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর শুরু হয় নতুন এক ছন্দ; একধরনের শান্ত অথচ প্রাণময় পরিবর্তন। এই পরিবর্তন শুধু ঋতুর নয়—এটা শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থারও। ক্লাস, পরীক্ষা, আড্ডা সবকিছুই যেন পায় নতুন গতি, নতুন রঙ।

সকাল ৭টা প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাঁড়ালে মনে হবে কেউ সাদা রঙ দিয়ে পুরো ক্যাম্পাসে হালকা করে ব্রাশ বুলিয়ে দিয়েছে। কোথাও মানুষের ছায়া, কোথাও চায়ের ধোঁয়া, আর কোথাও ছাত্র-ছাত্রীদের গাঢ় শীতের পোশাক পরে ক্লাসে যাওয়ার তাড়াহুড়া—সব মিলিয়ে শীতের সকাল জীবনের খুব কাছে টেনে আনে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে।

কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তখনো জমে থাকা শিশির স্পষ্ট। ঘাসের ডগায় আটকে থাকা ছোট ছোট পানিকণা যেন সূর্যের আলোয় স্ফটিকের মতো ঝিলমিল করে। কোনো কোনো সকাল এতটাই ঠান্ডা যে কথা বললেই ধোঁয়া বের হয় নিশ্বাসে—যেন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে শীতের ভার।

দুপুর পেরোলেই বেরোবির পড়ন্ত বিকেলটা হয়ে ওঠে সবচেয়ে প্রাণবন্ত। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সামনে তখন আড্ডার রোল।
বিকেলের নরম রোদে বসে মানুষ শুধু চা খায় না সম্পর্ক গড়ে, বন্ধুত্ব গাঢ় হয়, স্বপ্ন বলা হয়, কখনো বা তর্ক হয় কোন সিনেমা ভালো, কোন গান হৃদয়ে লাগে, আর কোন রাজনীতি বাস্তবে পরিবর্তন আনতে পারে।
সূর্য ডোবার পর বেরোবির আসল সৌন্দর্য যেন উন্মোচিত হয়। চারদিকে কুয়াশা এতটাই ঘন হয় যে ক্যাম্পাসের লাইটগুলো ঝাপসা গোল রিংয়ের মতো দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ফটক এর ভিতরের আলো, ভিসি ফিল্ড এর নীরবতা, দেবদারু রোডের উষ্ণ আলোকছটা—সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক স্বপ্নিল বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশেষ করে কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকাটি শীতের সন্ধ্যায় এক শান্ত, পবিত্র অনুভূতি দেয়। নীরবতার ভেতরেও একটা গাম্ভীর্য থাকে, যেন শীত আরও গভীর হয়ে ওঠে।

বেরোবির শীত শুধু দৃশ্য নয় এটি মানুষের গল্পও বহন করে।
কেউ প্রথমবার হোস্টেলে শীত কাটাচ্ছে, কেউ ক্লাস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে তর্কে মেতে আছে, কেউ আবার নীরবে বসে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে।

একটা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আসলে প্রকৃতি নয়—মানুষের উপস্থিতি। আর শীত সেই উপস্থিতিকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।

ডিসেম্বরে বেরোবি এমন এক ছবি হয়ে ওঠে যা ভাষায় ব্যাখ্যা করা কঠিন। নীরবতা আর কোলাহল একসঙ্গে মিশে যায়, কুয়াশা আর আলো জড়িয়ে ধরে পরস্পরকে, আর শিক্ষার্থীরা তৈরি করে তাদের জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলো।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শীত শুধু ঋতু নয়—একটি অনুভূতি, একটি স্মৃতি, একটি গল্প।
 

মন্তব্য লিখুন

সাম্প্রতিক মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পাদকের কলাম