Tuesday, April 22, 2025
Homeদিনাজপুর৭ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণ কাজ

৭ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণ কাজ

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

এনামুল মবিন, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ

দিনাজপুর চিরিরবন্দরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাঁকড়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ দীর্ঘ ৭ বছরেও শেষ না হওয়ায় চলাচলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ভোগান্তি ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে কাঁকড়া নদী। এ নদীর পশ্চিম পাশে ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, ইউপি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও নদীর পূর্ব-উত্তর দিকে চিরিরবন্দর উপজেলা। নদীর পূর্ব পাশে ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সেবাগ্রহণ করতে হলে নদীর অপরদিকের মানুষকে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে ভরসা বাঁশের সাঁকোই অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। বর্ষা মৌসুমে পারাপারের জন্য মানুষকে
নৌকার জন্য দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। নদীর পশ্চিম পাশের মানুষ উপজেলা কিংবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হলে ১০-১২ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়। এতে মানুষের অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ জনভোগান্তি দূর করতে ভিয়াইল গ্রামের ভিয়াইল ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ১৭৫ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতুটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সেতুটির নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এ সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। ২০২৩ সালের জুন মাসে কাজ শুরু হলে ১৫ জুলাই সেতুর চার নম্বর ক্রস গার্ডারটি নদীতে ভেঙ্গে পড়ে যায়। দুই দফায় নির্মাণ কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করলেও কাজ শেষ না করেই কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন থেকেই সেতুটি এভাবেই পড়ে রয়েছে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসেও এ সেতুর নির্মাণ কাজ ৪০ ভাগ অবশিষ্ট রয়েই গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অনুকূল থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি, কাজের মন্থরগতি ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু নজরদারি না রাখায় শেষ হচ্ছে না সেতুর নির্মাণ কাজ। শুধু তাই নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ করে রেখেছিল।

আরও জানা গেছে, সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে নৌকা ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের পারাপার হতে হচ্ছে। এতে সময় অপচয় এবং বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সেতুটির কাজ শেষ ও চালু হলে এ দুর্ভোগ থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করতো।

স্থানীয় নদীপাড়ের বাসিন্দা ফারজানা বলেন, হামার ভোগান্তির শেষ নাই। কোনো জরুরি দরকারে নদী পার হওয়ার চাইলে মেল্লা সময় নদীরপাড়ত নৌকার বাদে দাঁড়ে থাকির নাগে। আবার কাহো হঠাৎ করি অসুস্থ হইলে তাড়াতাড়ি উপজেলা হাসপাতালে নেওয়াও যায় না। নৌকার জন্য অপেক্ষায় থাকিলে রোগীর সমস্যা আরও বেশি হয়া যায়। এজন্য কয়েক মাইল ঘুরিয়া হাসপাতালত যাবার নাগে।

ভিয়াইল গ্রামের রিকশাভ্যানচালক রশিদুল ইসলাম বলেন, এখন শীতকাল চলছে। পানি কম থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হওয়া গেলেও বর্ষায় অনেক কষ্ট করতে হয়। রিকশাভ্যান নিয়ে অনেক কষ্ট করে নদী পার হতে হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ। এর নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ হলে আমাদের কষ্ট দূরীভূত হতো।

ওই গ্রামের আলাল হোসেন বলেন, সেতু না থাকায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদীর দুই পাড়ের মানুষ নানা ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করছি। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় আমরা গ্রামবাসীরা খুশি হয়েছিলাম যে, আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি বুজি শেষ হলো। কিন্তু কীসের ভোগান্তি দূর হলো উল্টো বেশি করে ভোগান্তি আরও বাড়ল। ৬-৭ বছর ধরে এখানে সেতু হচ্ছে হচ্ছে করে সেতুর কাজ আর শেষ হচ্ছে না। এখন দেখি ঠিকাদার মালামাল নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের দাবি দ্রুত সেতুর অবশিষ্ট অংশের কাজ শেষ করা হোক।

জয়পুর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ কিছুদিন চলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। আবার কখনও নদীতে গার্ডার ভেঙে পড়ে যায়। জরুরি কাজে নদী পার হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে কয়েক কিলোমিটার ঘুরতে হয়। ঠিকাদার ও স্থানীয় এলজিইডির গাফিলতির কারণে আমাদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। আমরা চাই বর্তমান সরকার সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করে আমাদের কষ্ট দূর করুক।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাসুদার রহমান বলেন, নতুন করে টেন্ডার দেয়া হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াটি শেষ হলেই দ্রুত সেতুর অবশিষ্ট অংশের কাজ শেষ হবে।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর