Saturday, April 19, 2025
Homeকুড়িগ্রামকুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ/ বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষকে পুনর্বহালে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ/ বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষকে পুনর্বহালে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

অনিল চন্দ্র রায়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলা প্রশাসন পরিচালিত কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের ‘স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত’ অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ মিলনকে পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। এ সময় অধ্যক্ষের ‘ভাড়াটিয়া বাহিনী ’ বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে শহরের খেজুরের তল মোড় ও কলেজ মোড়ে দুই দফায় এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এ নিয়ে তারা কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
এদিকে কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বদরুজ্জামান রিশাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা মৎস্য অফিসার। কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বি.এম কুদরত-এ-খুদা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষার্থীদের দাবি ও অনড় অবস্থানের মুখে অধ্যক্ষ মিলনকে স্থায়ী বরখাস্তের আদেশ দেন সাবেক জেলা প্রশাসক ও গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।

এদিকে জেলা প্রশাসনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধ্যক্ষ মিলন বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন। আদালত বরখাস্তের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। ফলে তাকে দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হয়েছে। এ খবর পাওয়ার পরপরই প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা আবারও প্রতিবাদ শুরু করে। তারা অধ্যক্ষ মিলনকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি তোলেন। দাবি আদায়ে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার শিক্ষার্থী রায়হান হাবিব রনি বলেন, ‘সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষ মিলন স্যারকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আমাদের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অধ্যক্ষের ভাড়া করা গুন্ডা বাহিনী হামলা করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে কলেজ ভবনে তালা আটকে রাখা হয়েছিল। পরে তালা ভেঙ্গে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়। দাবি আদায়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাজ্য জ্যোতি বলেন, ‘ আমাদের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অধ্যক্ষের ভাড়াটিয়া বাহিনী হামলা করে। কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বত্তরা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়। আমরা শিক্ষার্থীদের সেইভ করার চেষ্টা করেছি। পরে কলেজে গিয়ে দেখি পুলিশ প্রহরায় শিক্ষার্থীদের কলেজ ক্যাম্পাসে আটকে রাখা হয়েছে। কলাপসিবল গেইটে তালা ঝুলিয়ে তাদেরকে বের হতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙ্গে বের হয়ে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসন চত্বরে পৌঁছায়।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ মিলনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বি.এম কুদরত-এ-খুদা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ মিলনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কুড়িগ্রাম সদর থানার সেকেন্ড অফিসার ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাফায়েত বলেন, ‘ শিক্ষার্থীরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে সমকামিতা ও আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও এক কিশোরের সঙ্গে হারুন-অর-রশিদের একটি ‘আপত্তিকর’ ভিডিও কলের ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের দাবি তোলেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে সার্বিক দিক বিবেচনায় হারুন-অর-রশিদকে স্থায়ী বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় গভর্নিং বডি।

 

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর