মো. তোফাজ্জল হোসেন, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কাশিপুর মৌজার আত্রাই নদী থেকে চলছে বালুখেকোদের অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে দীর্ঘদিন বিক্রি করা সহ এখন অবৈধভাবে রাতের আঁধারে ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে বালু মজুদ অব্যাহত রেখেছে। এই সরকারি সম্পদ আত্মসাতের বর্তমানে মূল হোতা বিএনপি নেতা সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য হাজী শরিফুল ইসলাম প্রধান, ভুয়া ইজারাদার নুরুল ইসলাম, ইউপি সদস্য ফেরদৌস আলী ও হাসমত আলীসহ শক্তিশালী একটি চক্র।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নদী খননের বালু ১২টি লট তৈরি করে জনৈক নুরুল ইসলামের ২টি লট, এমএ খালেক সরকারের ৮টি লট ও ২ টি লট সাজেদুর রহমান অন্তুুর নামে ২ মাসের জন্য স্বল্প মেয়াদি ইজারা নিয়ে যথা সময়ে তারা সমুদয় বালু অপসারণ করে। কিন্তু দিনাজপুর-১ আসনের আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল সক্রিয় মদদে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বীরগঞ্জ উপজেলা সাবেক ইউএনও ফজলে এলাহী সহযোগিতায় তৎকালীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাষক জিয়াউর রহমান জিয়া, মজিবর রহমান মাষ্টার, আজাদ মাষ্টার এবং ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনুর রহমান চৌধুরী শাহীনের সমন্বয়ে গঠিত হয় সরকারী বালু খেকোর সিন্ডিকেট। তার অংশ হিসেবে ইউএনও ফজলে এলাহীকে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে আত্রাই নদীর কাশিপুরে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে। যা ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে সাবেক এমপি গোপালের অনুসারীরা।
আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর কাশিপুর বালুঘাটে অবৈধ বালু উত্তোলন সাময়িক বন্ধ থাকলেও ভুয়া ইজারাদার নুরুলের মাধ্যমে বিএনপি নেতা হাজী শরিফুল ইসলাম প্রধানসহ তার অনুসারীরা দখলে নেয়। ঘাট থেকে অবৈধ মাটি ও বালু উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের পর এখন প্রতিরাতে কাশিপুর জামে মসজিদের সামনে সহ বিভিন্ন স্থানে মজুদ করছে। যা বর্ষাকালে স্টক বালু অধিক মূল্যে বিক্রি করবে। ভুয়া ইজারাদার নুরল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি রাতের আধারে অবৈধভাবে বালু মজুদের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
সিনিয়র আইনজীবী চাঁন মিয়া বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড দণ্ডনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উপজেলা প্রশাসন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব চুরির এই সিন্ডিকেট কে আইনের আওতায় এনে মওজুদকৃত বালুগুলো বাজেয়াপ্ত করে সরকারের কোষাগারে আনতে পারেন, তাতে আইনগত কোন বাধা নেই। এলাকার মুজাহিদ, সামসুল, সামাদ, সাজ্জাদ হোসেন, কাশেম আলী, কোবাদসহ অনেকেই বলেন, আগে খেত আওয়ামী লীগের নেতারা, আর ক্ষমতায় না আসতেই এখন খাচ্ছে বিএনপি’র নেতারা। ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে আমলারা।সকলের জ্ঞাতসারে প্রকাশ্যে লাখ লাখ টাকার সরকারি সম্পদ মাটি ও বালু চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এর প্রতিকার দেখতে চায় সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান এবং বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদের সাথে কথা হলে তারা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।