Tuesday, April 1, 2025
Homeপঞ্চগড়নৌকাডুবিতে মা-বাবাকে হারানো ছোট্ট দিপুর পাশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

নৌকাডুবিতে মা-বাবাকে হারানো ছোট্ট দিপুর পাশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে স্মরণকালের ভয়াবহ নৌকাডুবিতে মা-বাবাকে হারানো ছোট্ট দিপুর পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে দিপুর পরিবারকে।

সোমবার (২৪ মার্চ) বিকেলে দিপুর বাড়িতে গিয়ে তার হাতে প্রথম মাসের টাকা তুলে দেন পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা ইকবাল হোসাইন। দিপুর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া অবধি এই টাকা পাবেন বলে জানা গেছে।

এসময় জামায়াত নেতা সফিউল্লাহ সুফি, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পঞ্চগড় জেলা সভাপতি আবুল বাশার বসুনিয়া, বোদা উপজেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল বাসেত, দেবীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল হালিম, সেক্রেটারি বেলাল হোসেন, দিপুর বড়ভাই দিপন রায় ও পরিতোষ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়ার সময় ৫ বছর বয়সি দিপুর লেখাপড়াসহ যাবতীয় দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

দিপুদের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর হাতিডুবা গ্রামে। সেখানে অন‌্যের জমিতে বাস করেন তারা। বড়ভাই দীপন ও পরিতোষই এখন তার অভিভাবক।

ঘটনাটি ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের। সেদিন বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী মন্দিরে ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়া উৎসব। তিন বছর বয়সি দিপু ওই উৎসবে যেতে বাবা-মায়ের সঙ্গে রওনা হয় করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটের দিকে। কারণ, ঘাটের অপরপ্রান্তেই বদেশ্বরী মন্দির। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছার আগেই সেদিন ঘটে এক বিরাট বিপর্যয়। শতাধিক যাত্রী নিয়ে করতোয়ার বুকে তলিয়ে যায় নৌকা। এ ঘটনায় মৃত্যুপুরী হয় করতোয়ার পাড়। অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরে ছোট্ট দিপু। একদিন পর ফিরে তার মা রূপালী রানীও। তবে জ্যান্ত নয়, প্রাণহীন লাশ হয়ে। একইভাবে প্রায় দেড়মাস পর পাওয়া যায় তার বাবা ভূপেন্দ্রনাথ রায়ের লাশ।

জামায়াতের আমীর জনসভায় বক্তব্যে বলেছিলেন, নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানি হয়েছিলো। আমরা আমাদের সাধ্যমতো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতার চেষ্টা করেছিলাম। তখন এই ছোট্ট দিপুকে কোলে নেয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম সে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার দায়িত্ব আমরা নিবো। পরে আমি দেখলাম এই এলাকার তৎকালীন সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং তার স্ত্রী দিপুর দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমি খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু আজকে দিপুর ভাই পরিতোষকে জিজ্ঞেস করে জেনেছি তারা মাঝে মধ্যে জামা-কাপড় ছাড়া কোন অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেননি। অর্থ ছাড়া দিপু খাবে কি? তার পড়ালেখার কি হবে? আলহামদুলিল্লাহ এই দিপু যতদিন প্রাপ্ত বয়স্ক না হবে ততদিন তার লেখাপড়া চলবে। আমরা এই পরিবারের সাথে প্রতিমাসে এসে হাজির হবো।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সেই নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে ৭১ জনই হিন্দু ধর্মের। ঘটনার তিনদিন পর জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানান এবং প্রত্যেক নিহতের জন্য ৩০ হাজার টাকা করে অর্থসহায়তা দেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল আবারও পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আরও ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান করেন।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর