Saturday, March 15, 2025
Homeলালমনিরহাটটমটম গাড়িতে প্রধান শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়

টমটম গাড়িতে প্রধান শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বারাজান এসসি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সরকার। আজ বৃহস্পতিবার চাকরি জীবনের শেষ দিন তাঁর। প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতে বিদ্যালয়ের আঙিনায় ঢল নামে শিক্ষার্থীদের। সুসজ্জিত ঘোড়ার টমটম গাড়িতে করে রাজকীয়ভাবে বাড়ি পৌঁছে দেন বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও এলাকাবাসী। এই বিদায় যেন শুধু এক শিক্ষকের নয়, বরং শিক্ষার প্রতি এক অন্তহীন শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।

প্রদীপ কুমার সরকার দীর্ঘদিন ধরে বারাজান এসসি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবনে তিনি আলোর দিশারি হয়ে ছিলেন। তাঁর অবসরের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মী এবং অভিভাবকেরা আয়োজন করেন ব্যতিক্রমী এ বিদায় অনুষ্ঠান।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ সেজেছিল রঙিন সাজে। বিদায়ী শিক্ষককে ঘিরে আয়োজিত হয় এক আবেগঘন আলোচনা সভা, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। তাঁকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা, ফুলেল শুভেচ্ছা। তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ অংশ ছিল সুসজ্জিত টমটম গাড়িতে তাঁর বিদায়যাত্রা। শিক্ষককে বসানো হয় ঐতিহ্যবাহী টমটমে, আর তাঁর পাশে বসেন তাঁর স্ত্রী, রানীর সাজে। চারপাশে শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর এলাকাবাসীর ঢল। বিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এই বিদায়যাত্রায় পথচারীরাও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন—এ যেন এক নীরব স্বীকৃতি একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতি।

গাড়িতে ওঠার সময় বিদায়ী প্রধান শিক্ষককে ফুলের মালা পরিয়ে, ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রদীপ কুমার সরকার। বিদায়ের মুহূর্তে তিনি বলেন, ‘আমি বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু দোয়া রেখে গেলাম। তোমরা নিজেদের মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।’ তাঁর এই কথায় সবার চোখেই পানি চলে আসে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বিদায় বড় কষ্টের, তবুও মানতে হবে। একজন শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করা হয়েছে। এটি শুধু বিদায় নয়, একজন শিক্ষকের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।’

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, ‘একজন শিক্ষক যখন চাকরিজীবন শেষে বিদায় নেন, তখন অনেক কষ্ট পান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ছেড়ে যাওয়া সহজ নয়। বিদায়ের কষ্ট কিছুটা লাঘব করতেই এমন আয়োজন করা হয়েছে। জেলায় প্রথমবারের মতো এমন উৎসবমুখর বিদায় অনুষ্ঠান হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষকের বিদায় এমনই হওয়া উচিত।’

বিদায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার, তুষভান্ডার মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান, এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার এ কে এম মঈনুল হক, চলবলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাপ হোসেন প্রমুখ।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর