প্রতিবেদক, রংপুর:
রংপুরে মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ১৯টি এনেস্থেসিয়া ভেপোরাইজার মেশিন কেনায় অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। সংস্থাটির দাবি, চীন থেকে এনেস্থেসিয়া ভেপোরাইজার মেশিনপত্র কেনা হয়। কিন্তু মেশিন কেনার বিলে জার্মানির দাম দেখানো হয়েছে। এছাড়াও মেশিনে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এসব বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে দুদুক।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রমেক হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাওন মিয়া। এ সময় হাসপাতালের পরিচালকসহ দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলোলোজি, অর্থ-প্যাডিক্স বিভাগ পরিদর্শন করে দুদকের টিম। এসময় সরবরাহকৃত মিশিনপত্রে অসঙ্গতি দেখতে পান দুদক কর্মকর্তারা। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন কিছু মেশিনের গায়ে স্টিকার নেই, কিছুতে চীনের স্টিকার রয়েছে। প্যাথলজি বিভাগে চারটি মেশিনের মধ্যে দুটি নষ্ট পান তারা।
প্যাথলজি বিভাগে কেমিস্ট্রি এনালাইজার মেশিন দুটির সেল কাউন্টার রি-এজেন্ট ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। যেখানে বায়োকমিক্যাল টেস্ট মেশিন দিয়ে একসাথে ৬০টির বেশি পরীক্ষা করানো যায়। কিন্তু মেশিন নষ্ট থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এনালগ পদ্ধতিতে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে বলে জানান প্যাথলজিস্টরা।
তারা জানান, আমরা বারবার বলার পরও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। তাই একটি টেস্ট করাতে একটু বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে। মেশিনগুলো ভালো থাকলে রোগীদের ভোগান্তি কম হতো।
শেষে পথ্য বিভাগে (খাবার সরবরাহকারী সেকশন) প্রবেশ করে অপরিচ্ছন্নতা পরিবেশ দেখতে পান তারা। সেখানে মুরগির মাংস সরবরাহে নানা অনিয়মের কথা শোনেন এবং রোগীদের খাওয়ার উপযোগী করতে রান্না করার কথা বলেন তারা।
অভিযান শেষে দুদকের রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাওন মিয়া জানান, নিওমো গত বছরে এপ্রিল মাসে দেশের বেশি কিছু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেকগুলো মেশিন সরবরাহ করে। তাতে অভিযোগ উঠে দরপত্র অনুযায়ী মেশিনগুলো জার্মানি থেকে কেনার কথা থাকলেও চীন থেকে কেনা হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ১৯টি এনেস্থেসিয়া ভেপোরাইজার সরবরাহ হয়। যা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে এবং সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এই দুদক কর্মকর্তা জানান, মেশিনগুলো কেনার কথা ছিল জার্মানির হায়ার কোম্পানি থেকে। আমরা দেখলাম কোনো সিরিয়াল নম্বর নেই। একেকটা মেশিনে একেক জায়গায় লেখা। আবার জার্মানিতে কেনার পরিবর্তে চায়না থেকে নেওয়া এসব মেশিনের বিল জার্মানির দামে দেখানো হয়েছে। এ ধরনের অসংগতি আমাদের নজরে এসেছে। আংশিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে অভিযোগ সত্য। আমরা বিশদ তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানান, এই মেশিনপত্রগুলো কেনাকাটার কোনো পর্যায়ের সাথে হাসপাতাল জড়িত নয়। নিওমি থেকে আমাদের সরবরাহ করা হয়েছে। কাগজপত্রে দেখা গেছে প্রতিটি মেশিনের দাম ৪ লাখ করে। বিষয়টি নিওমি অবহিত। সেই অনুযায়ী দুদক অভিযান পরিচালনা করেছে। এখন এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হবে সেটা আমরা বাস্তবায়ন করব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের চাওয়া এই হাসপাতালে সবচেয়ে আধুনিক মেশিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হোক। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হয় সেটির
প্রতি আমাদের গুরুত্ব থাকবে। অনিয়ম হলে আমরা কোনো ছাড় দেব না।