Saturday, March 15, 2025
Homeগাইবান্ধাভেঙে পড়ল গাইবান্ধার দেবে যাওয়া সেই সেতুটি

ভেঙে পড়ল গাইবান্ধার দেবে যাওয়া সেই সেতুটি

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

তিস্তা নদীর পাড়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলাবাসীর পারাপারের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। এবার পানির তীব্র স্রোতের কারণে ভেঙে গেল বেলকা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর শাখায় নির্মাণাধীন সেই সেতুটির একাংশ, যা কয়েক মাস আগে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গিয়েছিল। ফলে দীর্ঘদিনের পারাপারের ভোগান্তি দূর হওয়ার আশাও শেষ হয়ে গেল চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার মানুষের।

জানা যায়, উপজেলার বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের অন্তত ২০ হাজার মানুষ এই শাখা নদীর খেয়াঘাট ব্যবহার করে বাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে যাতায়াত করতো। নৌকা ধরতে প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে হতো তাদের। বিশেষ করে, অসুস্থ রোগীদের পারাপারে স্বজনদের ভোগান্তির সীমা থাকত না। সময়মতো ক্লাস ধরতে না পেরে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও পড়ত বিড়ম্বনায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নৌকা ধরতে না পারলে কখনো কখনো দু-এক ঘণ্টা করে ক্লাসও মিস হয়ে যেত।

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ। নকশা প্রস্তুত করে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সেতুটির দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয় ৩৪৪ ফুট এবং প্রস্থ ৫ ফুট। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ছানা এন্টারপ্রাইজ’।

প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করেই টাকার বিল উত্তোলন করে। বিষয়টি জানাজানি হলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং জুনের মাঝামাঝি কাজ শেষ হয়। তবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে কয়েক দিনের মধ্যেই সেতুর মাঝখানের অংশ দেবে যায়। এতে সেতুটি অচল হয়ে পড়ায় আবারও নৌকায় পারাপার শুরু করে স্থানীয় মানুষ।

এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা আশা করছিলেন, সেতুটি মেরামত করে পুনরায় চালু করা হবে। কিন্তু মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে তীব্র স্রোতের কারণে দেবে যাওয়া অংশসহ সেতুটির উত্তরের প্রায় অর্ধেক অংশ ভেঙে পড়ে। ফলে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দেয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, কাজের নিম্নমানের কারণে সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় আমাদের দীর্ঘদিনের কষ্ট আর দূর হলো না। এখন আগের মতোই নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে, যা সময় ও অর্থের অপচয় ঘটাচ্ছে এবং শিক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিন যুগ ধরে পারাপারের কষ্টের কোনো সমাধান পেলাম না। প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিলে মাসে ৩০০ টাকা ব্যয় হয়। রোগীদের হাসপাতালে নিতে কিংবা কৃষিপণ্য হাটে নিয়ে যেতে খুবই কষ্ট হয়। এই দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি মিলবে?

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বরেন, নিম্নমানের কাজের কারণে সেতুটির কয়েকটি পিলার গত জুনেই দেবে যায়। মঙ্গলবার সকালে সেই সেতুর অর্ধেক অংশ ভেঙে পড়েছে। এতে লোকজনের পারাপারে আবারও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে সেতু মেরামতের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের অবস্থান বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে নির্মিত সেতুটির এই করুণ পরিণতি সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের মান ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার চিত্র আবারও স্পষ্ট করে তুলেছে। এখন এলাকাবাসীর একটাই প্রশ্ন—কবে মিলবে তাদের পারাপারের ভোগান্তি থেকে মুক্তি।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর