Saturday, March 15, 2025
Homeগাইবান্ধাযৌথ বাহিনীর অভিযানে চেয়ারম্যানসহ আটক ৫, হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু

যৌথ বাহিনীর অভিযানে চেয়ারম্যানসহ আটক ৫, হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সাঘাটায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইটসহ পাঁচ জনকে আটক করেছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে ইউনিয়নের গোবিন্দী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিন জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মারা যাওয়া দুজন হলেন সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দী গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫) ও একই গ্রামের মালেক উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫)। আপেল গোবিন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শফিকুল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান সোহরাব।

আহত তিন জনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন (৪৫) ও একই ইউনিয়নের বাঁশহাটা গ্রামের শাহাদত হোসেন (২৮) এবং উত্তর সাতালিয়া গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মোশারফ হোসেন টানা তিনবারের চেয়ারম্যান এবং গোবিন্দী গ্রামের আব্দুল গণি সরকারের ছেলে। শাহাদত বাঁশহাটা গ্রামের সেরায়েত আলীর ছেলে এবং রিয়াজুল উত্তর সাথালিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে। রিয়াজুল চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের গাড়িচালক।

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে গোবিন্দী ও বাঁশহাটা থেকে চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনসহ পাঁচ জনকে আটক করেছিল। আটকের পর তারা অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এবং মামলা আছে, এজন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিকালে চিকিৎসাধীন চেয়ারম্যান ও শাহাদতকে দেখতে হাসপাতালে আসেন গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহাবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থায় সকালে তিন জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও সোহরাবের মৃত্যু হয়। বাকি দুজন সুস্থ আছেন। হাসপাতালে আনা তিন জনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

হাসপাতালে সোহরাবের স্বজনরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আটকের পর সোহরাবকে মারধরসহ শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শাহাদত হোসেনের দাবি, সোমবার রাতে বাজার থেকে কয়েল নেওয়ার সময় আমাকে আটক করে যৌথ বাহিনী। এরপর চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করা হয়। আমি কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। কখনও বাড়িতে কৃষিকাজ করি, কখনও ঢাকায় গিয়ে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কোন অপরাধে আমাকে আটক করা হয়েছে, তা জানা নেই।’

একই অভিযোগ করেছেন শফিকুল ইসলামের স্বজনরা। তারা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় নির্যাতনে মারা গেছেন শফিকুল।

তবে পুলিশের দাবি, অভিযানের সময় অসুস্থতার কারণে তারা মারা গেছেন। তাদের ওপর কোনও ধরনের নির্যাতন চালানো হয়নি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও তার ভাই সুজাউদ্দৌলা এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। যমুনা নদীর চর দখলসহ দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধ বালু মহালের ব্যবসা করছেন। এতে ফসলি জমি নষ্টসহ কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এতদিন ভয়ে মুখ খুলতে পারেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে এলাকাবাসী। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান ও তার ভাইসহ সিন্ডিকেট চক্রকে গ্রেফতারের দাবিতে কয়েক দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর