গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন, হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের হিলিতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চাল বিতরণে অন্তত ১৮ টন জনের ভূয়া তালিকা করে চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ১নং খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বরত প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামিম স্বপনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অন্তত বঞ্চিত ৩০০ জন গত বুধবার হাকিমপুর ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এমনকি ওই ভূয়া তালিকায় একাধিক মৃত ব্যক্তিদেরও না পাওয়া গেছে। ভূয়া তালিকা করে অন্তত ১৮ টন চাল আত্মসাত করেছেন অভিযুক্ত দায়িত্বরত প্যানেল চেয়ারম্যান। চাল আত্মসাতে জড়িত আরো তিন ইউপি সদস্য বলে জানা গেছে। তারা হলেন, ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শাহানুর রহমান, ৭নং ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ও ৮নং ওয়ার্ড সদস্য জাহঙ্গীর আলম।
জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উপজেলার ১ নং খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের ৪ হাজার ১৬৯ জনের ভিজিএফ চালের তালিকা করেন দায়িত্বরত প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামিম স্বপন। চাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে তালিকা প্রনয়নে সুকৌশল আবলম্ব করেছেন। তালিকায় একজনের নাম একাধিক বার ব্যবহার করেন। এক ওয়ার্ডের তালিকাভূক্তদের অন্য ওয়ার্ডের তালিকায় তাদের না ওঠানো হয়। এমনকি ওই তালিকায় মৃত ব্যাক্তিদেরও নাম পাওয়া গেছে।
উপজেলার মংলা বাজারের বাসিন্দা তাহাজ্জত আলী জানান, তার প্রতিবেশী মৃত রবিউল ইসলামের নাম ভিজিএফ তালিকায় রয়েছে। অথচ তাহাজ্জদ আলী গত ৩ বছর আগে মারা গেছে। এক বছর পূর্বে তার স্ত্রীর অন্যত্র বিয়েও হয়েছে। চেয়ারম্যান চাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ভিজিএফের তালিকায় না উঠিয়েছেন।
অভিযোগকারীদের মধ্যে মাধবপাড়া গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী বেগম জানান, ভিজিএফএর তালিকায় তার নামের সিরিয়াল ২৩৭৬। অথচ কয়েকবার চেয়ারম্যানের নিকট ভিজিএফ চালের জন্য গেলে তাঁর নাম তালিকায় নেই বলে জানিয়ে ফিরিয়ে দেন।
তিনি আরো বলেন, শুধু তাকে নয় এরকম অন্তত পাঁচশতাধিক মেয়েকে চাল না দিয়ে ফিরে দিতে দিয়েছেন।
আরেক অভিযোগকারী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, তার মাস্টার রোলের সিরিয়াল নাম্বার ২১০। তালিকায় তার নাম নেই বলে তাকেও ওই দিন চাল না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা গরীব মানুষ ঈদের আগে ভিজিএফের চালের অপেক্ষায় থাকি। সেই চাল যদি চেয়ারম্যান খায়া (খেয়ে ফেলে) ফেলায় তাহলে তো গরীবের তো আর বাঁচার পথ নাই। সরকারের উচিত গরীবের চাল মারে খাওয়া চেয়ারম্যানকে শাস্তি দেওয়া।
অভিযোগকারী সাইমুমুর রহমান ডলার জানান, ১ নং ওয়ার্ডের ৮৬ জনের , ২ নং ওয়ার্ডের ৭৫ জনের, ৩ নং ওয়ার্ডের ৬৩ জনের , ৪ নং ওয়ার্ডের ৫৬ জনের, ৫ নং ওয়ার্ডের ১১১ জনের, ৬ নং ওয়ার্ডের ১৩১ জনের, ৭ নং ওয়ার্ডে ৯২ জনের, ৮ নং ওয়ার্ডের ১০৯ জনের ও ৯ নং ওয়ার্ডের ৮৩ জনের মোট ৮০৬ জনের নাম অন্য ওয়ার্ডের মাস্টার সিরিয়ালে একাধিকবার ব্যাবহার করা হয়েছে। এবং ওই নামের বিপরীতে বরদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করেছে চেয়ারম্যান ও তার লোকেরা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ইউপি সদস্য জানান, ওই ইউনিয়নের দায়িত্বরত প্যানেল চেয়াররম্যান ছদুরুল শামিম স্বপন, ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শাহানুর রহমান, ৭ নং ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ও ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য জাহঙ্গীর আলম যোগশাজোসে ১৮টন জনের ভুয়া ভিজিএফ তালিকা করে চাল আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অভিযুক্ত দায়িত্বরত প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামিম স্বপনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কোন রিসিভ করেননি।
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা ইউএনও অমিত রায় জানান, ঈদে ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে একাধিক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমকর্তা (পিআইও) সুজন মিয়াকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুজন মিয়া জানান, গত বুধবার তদন্তের ভার পেয়েছি, অফিসিয়াল কাজের ব্যস্ত থাকায় এখনো তদন্ত শুরু করা হয়নি। আগামী সপ্তাহে তদন্ত শুরু করা হবে।