ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড় সদর উপজেলা হাফিজাবাদ ইউনিয়নে সেহরিতে মাইকে ডাকাকে কেন্দ্র করে একটি হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক এবং ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
গত শনিবার বিকেলে উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের তেলিপাড়া নেছারিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ঘটনাটি ঘটে। এতে মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রসহ আহত হয়েছেন ২৭ জন। অপরপক্ষের আহত হয়েছেন ২ জন। দুইপক্ষের মোট ২৯ জন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে এঘটনায় দুই পক্ষই থানায় এজহার দায়ের করেছেন। তবে কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের তেলিপাড়া নেছারিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মসজিদের মাইকে প্রতিদিন সেহরিতে রোজা রাখার জন্য ডেকে দেয়া হতো। সেহরিতে ডাকাডাকি নিয়ে প্রতিবেশী কায়েদে আজমের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন প্রতিবাদ করেন। পরে কয়েকদিন মাইক বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ওই সমাজের বেশিরভাগ মানুষ মাইকে ডাকার দাবি জানালে আবারো মাইকে ডাকাডাকি শুরু হয়। শনিবার বিকেলে পঞ্চগড়ে বাজার করে ফেরার পথে মাদ্রাসা শিক্ষক আরিফ হাসান ও মুহতাসিম বিল্লাহকে আটক করে কায়েদে আজম ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এসময় বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাবিনা ইয়াসমিন জুতা দিয়ে এবং কায়েদে আজম লাঠি দিয়ে তাদের মারধর শুরু করে। খবর পেয়ে মাদরাসার অন্য শিক্ষক ও ছাত্ররা ছুটে আসলে ওই দম্পতি ও তাদের স্বজনরা তাদেরও মারধর করে। এ সময় মাদরাসার পরিচালকের মা গুলজান নেহার (৫০) ও ৩ জন শিক্ষক ও ২১ জন ছাত্রসহ আহন হন ২৭ জন। অপরপক্ষের কায়েদে আজম ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনও আহত হন। তাদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মাদ্রাসা শিশু শিক্ষার্থী রিশাদ বলেন, আমি পানি খাচ্ছিলাম। এ সময় একজন এসে আমার হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এভাবে তারা আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষক ছাত্রদের মারধর করেছে।
মাদ্রাসা ছাত্র রেজওয়ান সরকার বলেন, আমাদের দুইজন শিক্ষককে মারধরের খবর পেয়ে আমরা এগিয়ে গেলে আমাদেরও নির্বিচারে মারধর করা হয়। আমাদের ঘরে ভাঙচুর করা হয়।
মাদরাসার শিক্ষক মুহতাসিম বিল্লাহ বলেন, ৫-৭ বছর আগে মাদরাসার জমি নিয়ে তাদের সাথে বিরোধ ছিল। এখন তারা সামান্য বিষয় নিয়েই ঝগড়া শুরু করে। মাইকে সেহরিতে ডাকার বিষয়ে তারা আপত্তি জানালে আমরা কিছুদিন মাইক বন্ধ রাখি। পরে বেশিরভাগ মানুষ ডাকার বিষয়ে দাবি জানালে পরে আবার ডাকা শুরু হয়। তবে মাইক অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এতে তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বিকেলে আমরা ফেরার পথে আমাদের আটক করে মারধর শুরু করে তারা। কায়েদে আজমের স্ত্রী জুতা দিয়ে এবং সে লাঠি দিয়ে মারধর করতে শুরু করে।
মাদরাসার পরিচালক বাকি বিল্লাহ আল আশরাফ বলেন, মাদরাসার শিক্ষক ছাত্র থেকে শুরু করে আমার মাকেও তারা ছাড় দেয় নি। সবাই এখন হাসপাতালে। আমরা অভিযোগ দিয়েছি। আমরা আশা করি ন্যায়বিচার পাবো।
অভিযোগ অস্বীকার করে কায়েদে আজম বলেন, মাইকে ডাকাডাকিকে কেন্দ্র করে ওরা আমার স্ত্রীর নামে এলাকায় আজেবাজে কথা ছড়িয়েছে। আমরা মাইক একটু উপরে দেয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা উলটো আমাদের বাড়ির দিকে মাইক ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা সবাই আমাদের উপর হামলা করেছে।
কায়েদে আজমের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, তারা উচ্চস্বরে মাইকে দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি করে। মাইক তারা আমার বাড়ির দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমার বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমার খুবই সমস্যা হচ্ছে। আমি তাদের একটি উঁচুতে মাইক বাঁধতে বা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছিলাম। তারা তা শোনেনি। তারা খাঁজা এনায়েতপুরীর অনুসারী। মাদ্রাসা আমাদের ১০ শতক জমি দখল করে রেখেছে। ওই জমিতে কবরও দিয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, সেহরিতে ডাকাডাকি ও পূর্ব শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জেনেছি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মামলা করেছেন। তাদের মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। অপর পক্ষের মামলাটি তদন্ত করে নথিভুক্ত করা হবে। এঘটনায় তদন্ত করে আসামি গ্রেপ্তার করা হবে।