Sunday, March 16, 2025
Homeঠাকুরগাঁওসম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে গেল পার্বতীপুর বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে গেল পার্বতীপুর বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

রুকুনুজ্জামান, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
উৎপাদন শুরুর দুই দিনের মাথায় আবারও বন্ধ হয়ে গেছে পার্বতীপুর বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম। গত সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে বিদ্যুৎবিভ্রাটের শঙ্কায় পড়েছে উত্তরাঞ্চল।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত একমাত্র কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি ২০০৬ সালে গড়ে ওঠে। কেন্দ্রটিতে ১নং ইউনিট ১২৫ মেগাওয়াট, ২নং ইউনিট ১২৫ মেগাওয়াট, ৩নং ইউনিট ২৭৫ মেগাওয়াট, মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট।

উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ২ টি ইউনিট  ২৫০মেগাওয়াট এবং ১টি ইউনিট ২৭৫মেগাওয়াট  ক্ষমতার।  ৩নং ইউনিটটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে উৎপাদনে আসে এবং ২০১৫ সালে এর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কেন্দ্রটিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা ব্যবহার করা হয়। এটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

১নং ইউনিট, ২নং ইউনিট বর্তমানে যন্ত্রাংশের অভাবে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ৩নং ইউনিটটি সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪) সকাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। আগেই বন্ধ ছিল দুইটি ইউনিট। ফলে সম্পূর্ণরুপে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ পার্বতীপুর বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ।

আরও জানা যায়, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল।

পাঁচ বছরের চুক্তি মোতাবেক আগামী বছর তাদের মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি অনুযায়ী, এ সময় উৎপাদন সচল রাখতে ছোট মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি ও কয়লার খরচ বেশি হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল দুটি ইউনিট। প্রতিটি ইউনিট সচল রাখতে প্রয়োজন দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প।

যা ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে।
কিন্তু ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয়  ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি নষ্ট থাকায় যেকোনো সময় বন্ধের ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প হিসেবে একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে চলে আসছিল এর কার্যক্রম। ফলে মাঝে মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হতো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন।

সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর মেরামতের মাধ্যমে ইউনিটটি চালু করা হলে দুই দিনের মাথায় সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর সকালে আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।

বিষয় আরও জানা যায়, ৩নং ইউনিটটি থেকে বর্তমানে উৎপাদিত ১৯০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল। এটি চালু রাখতে প্রতিদিন দুই হাজার ৩০০ মেট্রিক টন কয়লা লাগছে।

বড়পুকুরিয়ার তিনটি ইউনিটের মধ্যে ২নংইউনিটটি ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে আছে। গেল মাসে তৃতীয় ইউনিট বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎবিভ্রাট বেড়ে যায়। পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় চরমভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নিত হয়। ফলে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে দৈনিক কয়লা সরবরাহ করা হয় প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য দৈনিক প্রায় ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন। তবে এর আগে তিনটি ইউনিট একই সঙ্গে কখনোই চালানো সম্ভব হয়নি।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘চীন থেকে মেশিন নিয়ে এলে উৎপাদন শুরু করা যাবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিকল্প যন্ত্রাংশ দিয়ে এত দিন এ ইউনিট চালানো হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর সকালে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে  ১১টার দিকে সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম।’

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর