এ কে এম কায়সারুল আলম, রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা সেই ছাত্রনেতার পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি। রোববার সন্ধ্যায় নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, ইকোপার্ক নির্মাণ ও অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে যে জমিটির বিষয়ে আলোচনা উঠেছে, সেই জমির মূল মালিক তিনি। তার জমি দখল হওয়ায় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজির অভিযোগ শুধুই অপ্রচার; বরং ওই নেতারা অর্থের প্রলোভন অগ্রাহ্য করে সেখান থেকে চলে আসেন।
শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ভিডিওতে শোনা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের সঙ্গে এক ব্যক্তির টাকা নিয়ে দরকষাকষি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রংপুর নগরের কেরানিপাড়ার বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গঙ্গাচড়ার পূর্ব খলেয়া মৌজায় তার প্রায় ৫ একর জমি আছে। তার ভাই আতিকুল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলাম গং জাল রিটের মাধ্যমে জমিটি দখল করেন। আদালতে মামলা থাকলেও তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে জমি থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন।
তিনি দাবি করেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে তিনি রংপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতাদের দ্বারস্থ হন। তারা সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে যান। সেখানে জমি দখলকারীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের বিভিন্ন অনৈতিক অর্থের প্রলোভন দেখান। এ সময় গোপনে কথোপকথনের দৃশ্য ধারণ করে, এডিটিং করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঁদাবাজির ভিডিও বলে প্রচার করা হয়। তবে তিনি ছাত্র নেতাদের নাম বলতে পারেননি।
অন্যদিকে আজহারুলের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তার ছোট ভাই আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ হাসান ঘটনাস্থলে চাঁদা দাবি করতে গিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের কয়েকজন নেতা জানান, ওই কথোপকথনের ভিডিওটি এক সপ্তাহ আগের। রংপুর নগরের হাজিরহাট এলাকায় একটি ইকোপার্কের নামে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
কথোপকথনের কথা স্বীকার করে ইকোপার্কের পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, আজহারুলের সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে এই বিষয়টি জড়িত নয়। নাহিদ তার কাছে এক লাখ টাকা চাচ্ছিলেন। ভিডিওটি তারাই করেছিলেন এবং পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তবে ভিডিওটি তারা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেননি বলে দাবি করেন বেলাল।
এদিকে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ অস্বীকার করে নাহিদ হাসান খন্দকার বলেন, এক সপ্তাহ আগে অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি কারও কাছ থেকে এক টাকাও নেইনি। পুরোটাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে সংগঠন থেকে নাহিদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখ্য সংগঠক আলী মিলনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিন দিনের মধ্যে তার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।