কুড়িগ্রাম ও উলিপুর প্রতিনিধি : উলিপুর থানায় সালিশ শেষে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের সমর্থকরা পিটিয়ে হত্যা করে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরুল ইসলামের পক্ষের যুবদল নেতা আলমকে। এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে উত্তেজিত কর্মীরা প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও বাড়িতে আগুন দিয়েছে। নিহত আলমের বাবা আয়নাল হক বাদী হয়ে শনিবার ২০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। শনিবার বাদ আসর কাজিরচর মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আলমের লাশ দাফন করা হয়।
উলিপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুল জানান, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের সমর্থকরা শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় আলমকে পিটিয়ে হত্যা করে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দোলন এলাকার এক ছেলেকে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফড়া এলাকার এক মেয়ের সঙ্গে বুধবার রাতে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় ওই ছেলের বাবা ছাত্রদলের এক নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। শুক্রবার থানার গোল ঘরে উভয় পক্ষ মীমাংসায় বসে। আব্দুল খালেকের পক্ষের লোকজন এবং তাসভিরুল ইসলামের পক্ষের লোকজন বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আলম ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক আবুল হাসনাত রাজিবসহ কয়েকজন আহত হন। হামলার সময় ঘটনা স্থলে আলম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহকর্মীরা তাকে উলিপুর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আশরাফুল আলম পৌরসভার কাজিরচর এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী আয়নাল হকের একমাত্র ছেলে।
আলমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েল তাসভীরুল ইসলামের সমর্থকেরা আব্দুল খালেকের সমর্থক আমিনুল ইসলামের শুভেচ্ছা হোটেল ভাঙচুর করেন। এরপর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির কাজলের বাড়িতে আগুন দেন। এ সময় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের ফোনও বন্ধ ফলে তাদের মতামত জানা সম্ভব হয়ানি।
উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মেহেরুল ইসলাম জানান, আশরাফুল আলমকে হাসপাতালে আনা হয় রাত ৮টার দিকে। পরীক্ষা করে দেখা যায় হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। গত রাতেই কর্মস্থলে যোগ দেই। ঘটনা থানা চত্বরের বাইরে ঘটেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। নিহতের পিতা আয়নাল হক বাদী হয়ে শনিবার ২০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ২৫ জনের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ গুরত্ব দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশি টহল জোড়দার রয়েছে। বিকেল ৫টায় নিহতের বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।’