দিনাজপুর প্রতিনিধি: দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদত্যাগ করানোর হিড়িক চলছে। কিন্তু দিনাজপুরের এক বিদ্যালয়ে ঘটেছে এর ব্যতিক্রম ঘটনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে স্বপদে ফেরাতে আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে অন্য কাউকে বসতে দিতে নারাজ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৮ আগস্ট) এমনই দৃশ্যের দেখা মিললো দিনাজপুর শহরের সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) থেকে তারা বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। তাদের দাবি, প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে আসতে বাধা দিয়েছেন কিছু সুযোগসন্ধানী শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়াও বন্ধ করেছেন। প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে এবং ক্লাস বন্ধের ব্যাপারে জানতে চাইলে একেক সময় একেক কথা বলছেন সহকারী প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।
এই ঘটনায় বুধবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষককে স্বপদে ফেরাতে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বর্তমান প্রধান শিক্ষক রতন কুমার রায় যোগদান করার পর বিদ্যালয়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, বেড়েছে শিক্ষার মান। এ ছাড়াও সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন বিতর্ক, ফুটবল প্রতিযোগিতা, ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, হাতের কারুকাজ, বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থী তথা বিদ্যালয়। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রধান শিক্ষককে স্বপদে ফিরিয়ে দেওয়া।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রামিসা সারওয়ারের ভাষ্য, ‘রবিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়া বন্ধ করেছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্লাস হয়নি, এমনকি হাজিরার নাম ডাকাও হয়নি। বুধবারও একই ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত আমাদের ক্লাসে হাজিরা পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। পরে জানতে পেরেছি যে, শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল স্যারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন কথা বলতেছেন।’
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বর্ষার কথায়, ‘কয়েকদিন আগে আমাদের প্রধান শিক্ষক রতন স্যারকে কয়েকজন শিক্ষক অপমান করেন। স্যার তো বিদ্যালয়ের উন্নয়ন করেছে আমাদের জন্য। এই কারণে কিছু শিক্ষক স্যারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে বেড়াচ্ছেন। আমরা চাই, স্যার যেন তার চেয়ারে পুনরায় ফেরত আসেন। নইলে সেই চেয়ারে আর কোনও স্যারকে বসতে দেবো না। প্রয়োজনে আমাদের আন্দোলন চলমান রাখবো। স্যার না আসা পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাবো না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর ভাষায়, ‘বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক নানানভাবে হুমকি প্রদান করছেন। এমনকি আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাইলে আমাদের আটকে রেখে বাধা প্রদান করা হচ্ছে।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু আর্থিক অসংগতির অভিযোগ রয়েছে। তাই সকল শিক্ষক চাচ্ছে এ ব্যাপারে অডিট হোক। এই কারণে শিক্ষকরা ক্লাসে যাচ্ছেন না বা হাজিরা নিচ্ছেন না। কিন্তু অডিটের বাহানায় ক্লাস বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নেই।’
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের কাছে আমরা কিছু হিসাব চাই। তার হিসাবে কিছু গরমিল রয়েছে। এজন্য আমরা ক্লাস বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ক্লাস বর্জন করা আমাদের ঠিক হয়নি। এটা আমাদের ভুল হয়েছে। প্রধান শিক্ষক অসুস্থ থাকায় বিদ্যালয়ে আসেননি।’
তবে প্রধান শিক্ষক রতন কুমার রায় বলেন, ‘অযৌক্তিক দাবি দিয়ে আমাকে নিয়মবর্হিভূতভাবে বিদ্যালয় থেকে সরানোর চেষ্টা করছে একটি মহল।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানে আলম বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব পালন করার জন্য চিঠি হাতে পেয়েছি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’