Saturday, March 15, 2025
Homeআন্তর্জাতিকতেলাপিয়ার বিস্তার ঠেকাতে মরিয়া থাইল্যান্ড

তেলাপিয়ার বিস্তার ঠেকাতে মরিয়া থাইল্যান্ড

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

অনলাইন ডেস্কঃ তেলাপিয়া মাছ ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। আর এ জন্য এ মাছ নির্মূলে উঠেপড়ে লেগেছে থাইল্যান্ড সরকার। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া নামের এই প্রজাতি থাইল্যান্ডের অন্তত ১৭টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মাছ অন্যান্য ছোট মাছ, কুচো চিংড়ি ও শামুক, লার্ভা খেয়ে ফেলছে, যেগুলো থাইল্যান্ডে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশটিতে এগুলোর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। সেই ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি করছে তেলাপিয়ার এই প্রজাতি।

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেলাপিয়ার এই জাত কীভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তার কারণ খুঁজে বের করতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট। ব্যাংককের একজন আইনপ্রণেতা নাত্তাচা বুনচাইনসাওয়াতের মতে, ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণে থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে অন্তত ২৯৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। নাত্তাচা বুনচাইনসাওয়াত বলেন, আমরা একটি বিধ্বস্ত ইকোসিস্টেম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যাব না।

উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কমিটি গঠনের পাশাপাশি ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়ার বংশবিস্তার রোধে নদী ও জলাশয়ে ভেটকি ও মাগুরের মতো বিভিন্ন শিকারি মাছ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া ধরতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ মাছ ধরলে কেজিপ্রতি দ্বিগুণ দাম দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। পানিতে নেমে মাছটি তুলে নেয়ার পাশাপাশি জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমেও এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর জোর দিচ্ছেন কর্মকর্তারা।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বর্তমানে এক কেজি তেলাপিয়া ধরতে পারলে ওই ব্যক্তিকে সরকারিভাবে ১৫ বাথ (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫২ টাকা) দেওয়া হয়। তবে থাই সরকার এমন একটি মাছের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, যার প্রজনন সক্ষমতা অনেক বেশি। একটি মা তেলাপিয়া একবারে ৫০০টির বেশি মাছের জন্ম দিতে পারে।

মাছটির প্রজনন সক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ করে নাত্তাচা বুনচাইনসাওয়াত বলেন, এই মাছের প্রাদুর্ভাব কমাতে আমাদের অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। অন্যথায় এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

থাইল্যান্ডের ওয়ালাইলাক ইউনিভার্সিটির জলজ প্রাণীর জেনেটিকস বিশেষজ্ঞ ড. সুইট উথিসুথিমেথাভি অবশ্য মাছটি পুরোপুরিভাবে নির্মূলের সম্ভাবনা দেখছেন না। তিনি বলেন, আমরা এর পরিসর সীমাবদ্ধ করে দিতে পারব না। কেননা, যখন এটি প্রকৃতিতে থাকে, তখন এর একটি দ্রুত প্রজনন চক্র বিদ্যমান থাকে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এলিয়েন প্রজাতির (ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া) সমস্যা হচ্ছে, এটি একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে তাদের নির্মূল করা খুব কঠিন।

চিবুক এবং গালে কালো দাগের কারণে ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া সহজে শনাক্ত করা যায়। থাই পার্লামেন্টের আলোচনায় উঠে আসে, ২০১০ সালের শেষ দিকে কীভাবে চারোয়েন পোকফান্ড ফুড (সিপিএফ) নামের একটি পশুখাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরীক্ষামূলকভাবে ঘানা থেকে মাছটি আনা হয়েছিল। তখন দুই হাজার মাছ আনা হয়। তবে পরে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সব মাছ তারা মেরে ভালোভাবে মাটিচাপা দিয়েছে। তবে এর দুই বছরের মাথায় স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম থাই পিবিএসের খবরে চারোয়েন পোকফান্ড ফুডের পরীক্ষাগার এলাকাসহ থাইল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়ার প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি উঠে আসে। অভিযুক্ত কোম্পানির পক্ষ থেকে ওই সময় বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা হয়। এমনকি ‘ভুল তথ্য’ প্রচারের অভিযোগে থাই পিবিএসের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দেয় তারা।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর