Saturday, March 15, 2025
Homeরংপুরতিস্তা নদীর রক্ষা বাঁধ কেটে বালু লুট

তিস্তা নদীর রক্ষা বাঁধ কেটে বালু লুট

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদী রক্ষা বাঁধ কেটে বালু লুট চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে একটি চক্র তিস্তার বালু লুট শুরু করেছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রভাবশালীদের বাধা দিলে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর ডান তীরে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পূর্ব সীমানা থেকে গজঘণ্টা ইউনিয়নের পূর্ব সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ৮টি বালুর পয়েন্ট রয়েছে। এসব স্থানে অবৈধভাবে খননযন্ত্র (ড্রেজার) ও ট্রলি দিয়ে রাতভর অবৈধ বালুর ব্যবসা করছেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি। কয়েকটি স্থানে তিস্তা নদী রক্ষা বাঁধ কেটে সরাসরি নদীতে ট্রলি নামিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কেউ আবার বাড়ি করার কথা বলে আগে বালু উত্তোলন করে পরে তা বিক্রি করে দিচ্ছেন।

উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের কালীরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী রক্ষা বাঁধ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বালু। সাংবাদিক আসার কথা শুনে কেটে দেওয়া বাঁধ মেরামত করছেন সাবুল মিয়া (৩০) নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। এ সময় তাঁর কাছে বাঁধ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘কারা বাঁধ কাটছে আমি কিছু জানি না। একটু আগে কয়েকজন ট্রলিচালক আমাকে ৩০০ টাকা দেওয়ার কথা বলে ভেঙে যাওয়া বাঁধের স্থানগুলোতে মাটি দিয়ে সমান করে দিতে বলল। তাই সমান করছি।’

পাশেই একটি চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। এ সময় তাঁদের কাছে বালু তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের এই কালীরচরে বালু ব্যবসায়ী এনামুল ও লিটন তিস্তার বাঁধ কেটে বালু তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাঁরা নদীতে ১৬ থেকে ১৭টি ট্রলি নামিয়ে দিয়ে রাত ১০টার পর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বালু উত্তোলন করেন। এখানেই যে শুধু বালু উত্তোলন করেন তা কিন্তু নয়। আমাদের এই কালীরচর থেকে শুরু করে প্রায় মর্ণেয়া, গজঘণ্টা ইউনিয়ন পর্যন্ত নদীর ধারে ৭ থেকে ৮টি বালুর পয়েন্ট রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই এদের বালুর ব্যবসা বেড়েছে। প্রতিদিন এই পয়েন্টগুলো থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়।

গজঘণ্টা ইউনিয়নের মৌভাষা এলাকার বাসিন্দা জামাল মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার ট্রলিচালক ও বালু ব্যবসায়ী বেলাল মিয়া রাজনীতির সঙ্গে জড়িত লোকজনকে টাকা খাইয়ে তিস্তা থেকে ড্রেজার লাগিয়ে বালু তুলে নেন। পরে সেই বালু বিক্রি করেন। শুধু আমাদের মৌভাষায় বেলালই নয়, এখানকার কয়েক ব্যক্তি বাড়ির প্রয়োজনের কথা বলে নদী থেকে বালু তুলে পরে তা বিক্রি করে দেন। স্থানীয় লোকজন কিছু বললেই তাঁরা হুমকি দেন।’

গজঘণ্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক এলাকার বাসিন্দা জাহানুর বলেন, বালু ব্যবসায়ীরা যেভাবে তিস্তার বাঁধ কেটে, ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছেন, তাতে নদীতে পানির একটু চাপ বাড়লেই বাঁধ উপচে জনবসতিতে পানি ঢুকে পড়বে। এসব দেখার কি কেউ নেই?

অভিযোগের বিষয়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ী এনামুল ও লিটনের সঙ্গে ঘটনাস্থলে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাঁরা সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ট্রলি রেখে সটকে পড়েন। পরে তাঁদের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, ‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলেই এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেল, জরিমানা এবং নিয়মিত মামলা করা হবে।’

-পায়েল/গঙ্গাচড়া

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর