নতুন সরকার ভাতার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন টাকা তুলতে নতুন পিন কোড দেওয়া হবে। দ্রুত মোবাইল ফোনে পুরোনো পিন কোড পাঠিয়ে নতুনটি সংযোগ করুন। নতুবা টাকা ফেরত যাবে।’– সরকারি বিভিন্ন ভাতাভোগীর কাছে খুদে বার্তা পাঠিয়ে ‘নগদের’ পিন কোড সংগ্রহে এমন কৌশল নিয়েছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ভাতাভোগীদের সচেতন করতে প্রচারে নেমেছে সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর।
দপ্তর সূত্র জানায়, সরকারি বিভিন্ন ভাতাভোগী ৪০ হাজার ২৯ জন। প্রতি মাসে তাদের জন্য বরাদ্দ হয় ২ কোটি ৭২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫০ টাকা। প্রতিবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা বিতরণের পর গড়ে ১ শতাংশ ভাতাভোগী প্রতারিত হন। তাতে এই সংখ্যা দাঁড়ায় গড়ে ৪০০ জনে। তারা গড়ে প্রায় ২ হাজার টাকা খুইয়ে থাকেন। এভাবে প্রতি তিন মাসে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৮ লাখ টাকা। এতে বছরে দাঁড়ায় ৩২ লাখ টাকা। এই হিসাবে তিন অর্থবছরে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৯৬ লাখ টাকা।
প্রতি তিন মাস অন্তর মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটর নগদের মাধ্যমে ভাতাভোগীদের মোবাইলে টাকা পাঠানো হয়। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে এই উপজেলায় টাকা বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে নগদ। কিন্তু ভাতার টাকা বিতরণ শুরু হওয়ার সম্ভাব্য সময়ের আগ থেকেই প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই চক্র ভাতাভোগীদের ফোন দিয়ে কৌশলে টাকা উত্তোলনের পিন কোড জেনে নেয়। এর পর মোবাইলে টাকা ঢোকা মাত্রই তা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র।
সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় জানান, ভাতাভোগীদের বিশাল অংশই অসচেতন। তারা প্রতারিত হওয়ার পর সমাজসেবা অফিসে আসেন। অনেকে যান থানায়। তাদের পরবর্তী কিস্তির টাকা উত্তোলনের আগেই নতুন সিম (মোবাইল নাম্বার) অথবা নতুন পিন কোড ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রতারণার শিকার জয়েনপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী রেখা বেগমের ভাই মোস্তাফিজার রহমান বলেন, প্রথমবার টাকা আসার পরই একজন ফোন দিয়ে নিজেকে সমাজসেবা অফিসের লোক পরিচয় দিয়ে পিন কোড চান। পিন কোড বলার পরপরই মোবাইল থেকে টাকা উধাও হয়ে যায়। পরের বারও ফোন দিয়েছিল প্রতারকরা। বকাঝকা করায় এর পর আর ফোন করেনি।
মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’-এর সাদুল্লাপুর শহরের এজেন্ট আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতারক চক্রকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গভীরভাবে কাজ করতে হবে। এদের দমাতে না পারলে ভাতাভোগীদের সমস্যা হতেই থাকবে।
সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বলেন, দেশে নতুন সরকার আসার পর প্রতারক চক্র ফের সক্রিয় হয়েছে। ভাতাভোগীদের সচেতন করতে লিফলেট বিতরণসহ ইউনিয়ন পরিষদ ও সুধীমহলের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওছার হাবিব বলেন, ভাতাভোগীরা দরিদ্র মানুষ। তারা প্রতারিত হলে কষ্টে থাকবেন। তারা যাতে সমস্যায় না পড়েন, সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। তিনি ভাতাভোগীদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি টাকা বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নগদকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে অনুরোধ জানান।