তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি: রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের কর্মবিরতির ফলে এখানে
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহীতারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
রবিবার (১১ এপ্রিল) বেলা বারোটার সময় সরেজমিনে উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে
রয়েছে। এদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা চিকিৎসা সেবা নিতে
আসছে বলে জানায়।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কুর্শা ইউনিয়নের কচুগাড়ি বাহাদুর
পাড়া গ্রামের মুনজিয়াল হক (৩৫) নামের এক ব্যক্তির সাথে
কথা হলে তিনি জানান, আমার শরীরে সমস্যা। চিকিৎসা সেবা
নিতে এসেছি এখানে হাসপাতালে। কিন্তু এখানে আমি প্রায় ২ ঘণ্টা
থেকে আছি কোন সেবা পাইনি। দায়িত্বরত ব্যক্তিদের আমি অনেক
বলেছি কিন্তু তাঁরা আমাকে চিকিৎসা সেবা দেয়নি। আমি এখানে
শুনলাম কোন সমন্বয়ক নাকি কোন চিকিৎসককে মারপিঠ করছে
সেজন্যই তাঁরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ঘনিরামপুর গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধা
আমেনা বেওয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বাবা মুই গরীব
মানুষ। মোর স্বামী ২০ বছর আগোত মরি গেইছে। মোর বেটা
ছোয়া নাই। মোর দুইটা বেটি ছোয়া আছিলো ওমার বিয়াও দিয়া
দিছুং। মুই কোনরকম দুইবেলা দুই মুঠ ভাত খেয়া বাঁচি আচুং।
মোর ঔষধ কিনি খোয়ার টাকা নাই। মুই আগোত ঔষধ
মেডিকেল থাকি ফ্রি ঔষধ নিয়া যেয়া খাচনু। কাইলও আসছুনু
ঔষধ দেয় নাই আইজও আলচুং তাও ঔষধ দেয়ছে না। মুই ঔষধ
চাইলে যায় ঔষধ দেয় তায় কয়ছে ঔষধ হবার ন্যায়। ওমাক
বেলে কোন চ্যাংরা ডাংগাইছে তাঁর বিচার না হওয়া পর্যন্ত বেলে
ঔষধ দেবেনা। কোন ঠাকার কোন সমন্বয়ক চ্যাংরা ডাক্তারোক
ডাংগাইল আর হামার গরীব মানুষোক ঔষধ না খেয়া মরি যাবার
নাগোছে। কায় ওমাক মেডিকেলোত আসি ডাক্তারোক ডাংগার
কইছে? ডাক্তার যে হামাক আইজ ঔষধ দেয়ছেনা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মুল গেটের সামনের ঔষধের দোকানের
মালিক রেজাউল করিম লওয়াব বলেন, দুই দিন থেকে হাসপাতালে
বাইরে থেকে আসা রোগিরা ডাক্তার ও কর্মচারীদের কর্ম বিরতির
কারণে ঔষধ পাচ্ছেনা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক গরীব মানুষও
আমাদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছে।
একই কথা বলেন তাঁর পাশের আর এক ঔষধের দোকানের মালিক
মোঃ বাদল রানা।
গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার সময় নিজ
কর্মস্থলে দুই সমন্বয়ক তুর্য (২৩) ও তাওরাত (২৩) নামের
দুইজন দ্বারা ডাঃ সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ অকথ্য ভাষায়
গালিগালাজ, সরকারি দায়িত্বে বাধা প্রদান ও শরীরে আঘাত
করেছে বলে তারাগঞ্জ থানায় ওই চিকিৎসক বাদি হয়ে অভিযোগ
করেছে। অভিযুক্ত দুই সমন্বয়কের বাড়ি উপজেলার কুর্শা
ইউনিয়নের ঘনিরামপুর কলেজপাড়া এলাকায়।
অভিযুক্ত তুর্য সরকার বলেন, গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) আমি
আমার অসুস্থ্য বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাই।
সেখানে গিয়ে ওনাকে আমার বাবাকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য
অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি ওই সময়ে চেয়ারে ফ্রি বসে থাকলেও
আমার বাবাকে চিকিৎসা দিতে গড়িমসী করেন। তিনি আমাকে
বলেন, তোমার কথায় আমি তোমার বাবাকে চিকিৎসা দিবো?
আমি তোমার বাবাকে চিকিৎসা দিতে পারবোনা।
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রুবেল রানা
বলেন, ঘটনার দিন আমি সেখানে গেছিলাম। খোঁজখবর নিয়েছি ও
বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
তারাগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন,
এই বিষয়ে আমি অভিযোগ পেয়েছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি