কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশেষ ক্লাসের নামে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে। রাজীবপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। রোববার (৯ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানান গেছে।
শিক্ষার্থী ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, ফরম ফিলাপ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মানবিক শাখার জন্য ২৮০০ টাকা ও বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৩০০০ টাকা। তবে এই ফি’র বাইরে বিশেষ ক্লাসের নামে আরও নেওয়া হচ্ছে ২০০০ টাকা।
রাজীবপুর মহিলা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইভা খাতুন ও রুমকি বলেন, ফরম ফিলাপ ফি বাবদ ২৮০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এরপর কোচিংয়ের জন্য দিতে হয়েছে ২০০০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, “কোচিং ফি না দিলে ফরম ফিলাপ হবে না বলে স্যাররা চাপ দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে আমরা টাকা দিয়েছি। আমাদের মধ্যে অনেকের বাবা কৃষিকাজ, দিনমজুরির কাজ করেন, কারও “মা” নৌকা চালিয়ে সংসার চালান। ফরম ফিলাপের টাকা জোগাড়ই যেখানে কষ্টকর, সেখানে অতিরিক্ত ২০০০ টাকা জোগাড় করা খুবই কঠিন।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কলেজের ইংরেজি শিক্ষক রেজাউল করিমের নামে অভিযোগ করে বলেন, আমি শুধু বলছিলাম স্যার! আমাদের তো অর্থনীতি সাবজেক্ট (অপশনাল) বিষয়টা তো কঠিন। সপ্তাহে দুদিন যদি ইংরেজি ও আইসিটি সাবজেক্টের পাশাপাশি অর্থনীতি টা দিতে পারেন। এটা বলায় স্যার, আমার ওপর চড়াও হয়ে আমাকে বাবা-মা তুলে গালিগালাজ করতে থাকেন। ওইদিন আমি বাসায় গিয়ে সারাদিন কান্নাকাটি করেছি। আম্মা কলেজেও আসতে চেয়েছিল।
তবে অভিযোগের বিষয়ে ইংরেজি প্রভাষক মুহা. রেজাউল করিম বলেন, পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয়ে আমি শিক্ষার্থীদের শাসন করি। কিন্তু টাকার বিষয়ে আমি তাদের সঙ্গে কখনও কোনো কথা বলিনি। আমি সব সময় তাদের সহযোগিতা করেছি। কিছু শিক্ষার্থী আছে, যাদেরকে আমি বই কিনেও দিয়েছি।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর অবিভাবক জানান, ফরম ফিলাপের টাকাই দিতে পারি না। তার মধ্যে আরও বাড়তি দিতে হচ্ছে দুই হাজার টাকা। তারা অভিযোগ করে বলেন, ফরম ফিলাপ ফি ধরা হয়েছে ২৮০০ টাকা। কারও কাছে নেওয়া হচ্ছে ২০০০ হাজার, কারও কাছে ২৫০০, আবার কারও কাছে নেওয়া হচ্ছে পুরো টাকাই। এখানেও স্বজনপ্রীতি করছেন শিক্ষকরা।
কোচিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর মহিলা কলেজের বাংলা প্রভাষক আমিনুল ইসলাম বলেন, এটা কোচিং না, বিশেষ ক্লাসের জন্য ২০০০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। যারা অকৃতকার্য তারা ঠিক মতো ক্লাসে আসেন না। আবার ওরা ফরম ফিলাপ করারও যোগ্য না। তাদেরকে আমরা বিশেষ বিবেচনা করে যারা ২-৩ টি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। তাদেরকে আমরা ফরম ফিলাপের সুযোগ দিয়েছি। নিয়মিত ক্লাস রাখার জন্য তাদেরকে এখানে আহŸান করা হয়েছে। তারা খুশি হয়ে যা দিবে, সেই টাকাই এখানে নেওয়া হবে। চাপ প্রয়োগ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, কাউকে চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।
কথা হয় রাজীবপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান বলেন, “বিশেষ ক্লাসটি শিক্ষার্থীদের অনুরোধেই নেওয়ার পরিকল্পনা হয়। অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদেরকে ফোন দিয়েও কলেজে নিয়ে আসা যায়নি। তারা ক্লাসে আসে না। এখন শিক্ষার্থীরা যদি বলে, তারা বিশেষ ক্লাস করবে না, তাহলে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
কথা হয় রাজীবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ফরম ফিলাপ ফি ২২০০ টাকার আশেপাশে। কোচিং বা বিশেষ ক্লাসের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। আমরা তো কিছু করতে পারি না।