মো:আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছে ডোমার উপজেলার হরিনচড়া ইউপির শেওচগাড়ী এলাকার ঝলমলি রানী।(৮০)। আশি বছর বয়সেও প্রতিদিনেই তিনি কাজ করেন। কাজ করে যা পান তাই দিয়ে ওষুধ কিনতে হয় তাকে। বাকী টাকা দেন ছেলের হাতে। এই বয়সে কাজ করছেন কেন প্রশ্ন করলেই বলেন , যত দিন কাজ করতে পারবো ততদিন কাজ করে যাবো। ছেলের সংসারে কিছুটা সাহায্য আর কি। যখন কাজ করতে পারবো না, তখন ছেলে দেখবে বলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। নারী দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলে সেটা আবার কি। তিনি বলেন কাজ করে টাকা পাই। কাজ না করলে কেউ টাকা দেয় না। ঐ সব দিবস আমাদের কোন কাজে আসেনা।
ঝলমলির মত অনেক নারী শ্রমিক জানেই না নারী দিবস কী। দিনমজুর নারীরা শুধু জানে কাজ না করলে কেউ টাকা দিবেনা। আর টাকা না পেলে তাদের না খেয়েই থাকতে হবে। তারা শুধু জানে কাজ করলে টাকা পাওয়া যাবে, কাজ না করলে টাকা পাওয়া যাবে না। অথচ প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশেও নারী দিবস পালিত হয় জাকজমক ভাবে। কিন্তু নারী দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন নয় এখানকার শ্রমজীবী নারীরা।
ডোমার উপজেলার সোনরায় বাজারে আলু বাছাই করতে এসেছেন দুই সন্তানের জননী লাইলী বেগম (৩৫)। আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো দিবস বুঝি না। অভাবের তাড়নায় সংসার চালানোর জন্য কাজ করতে এসেছি। কোন কোন সময় ঈদের দিনও কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, আমরা পুরুষের সমান কাজ করি। কিন্তু আমাদের বেতন তাদের মতো দেয় না। পুরুষের মতো বেতন পেলে আমাদের কোনো সমস্যা থাকতো না। লাইলীর মতো প্রায় শতাধিক নারী কাজ করছেন আলু বাছাইয়ের বিভিন্ন সেটে। তারা প্রতিদিন ভোরে রান্নাসহ বাসার সব কাজ সেরে সকাল ৭ টার মধ্যে বেরিয়ে পড়েন। কোনো কোনো দিন কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাসায় ফিরতে হয় অনেক নারীকে।
নারী শ্রমিক ঘুনুবালা (৬৭) বলেন, আপনাদের মাধ্যমেই শুনি প্রতিবছর নারী দিবস পালন করা হয়। তবে আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না।কাজ করলে টাকা না করলে এক গ্লাস পানিও কপালে জুটে না।
মমিনা নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করলেও মজুরী কম পাই। পুরুষ শ্রমিকরা ৫ শত টাকা পেলেও আমরা পাই ২৫০ থেকে ৩০০ শত টাকা।
বাবলি বেগম নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, নারী দিবস কি আমরা জানি না। এই দিবস আমাদের কোন উপকারে আসে না। নারী দিবসেও আমরা কাজ করি। আর কাজ না করলে আমরা খাবো কি।
ঘুনুবালা(৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নারী বলেন, বিয়ের তিন বছরের মাথায় দুই সন্তান রেখে স্বামী মারা যায়। কয়েক বছর পরেই দুই সন্তানও মারা যায়। শেওটগাড়ীতে ভাইয়ের বাসায় থাকি। প্রতিদিনেই কাজ করে যা পাই তা দিয়েই চলে আমার দিন। বিধবা ভাতা পেলেও সেটা সামান্য। বিধবা ভাতা দিয়ে ওষুধের টাকাও হয়না। বিধবা ভাতার টাকার পরিমান বাড়ানোর আহবান জানান তিনি।
বিদ্রোহী কবি নজরুল বলেছিলেন বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। তবুও সমাজে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
প্রতিবছর ঘটা করে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে, তবে গ্রাম বা শহরের বেশিরভাগ নারীরাই নারী দিবস সম্পর্কে অজ্ঞ। বেশিরভাগ নারীরাই জানেনা তাদের অধিকার সম্পর্কে।