অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা :
নিষিদ্ধ পলিথিনের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব কলাপাতায় লবণ বিক্রি করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন লবণ ব্যবসায়ী সমসের আলী। তবে মাত ১৬/১৭ দিনের মধ্যে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। কলাপাতা ছেড়ে ফের নিষিদ্ধ পলিথিনে লবণ বিক্রি করছেন তিনি। উপজেলার খরিবাড়ী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, লবণ ব্যবসায়ী আবারও পূর্বের ন্যায় পলিথিনে করে লবণ বিক্রি করছেন।
গত দুই আড়াই মাস আগে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে পলিথিন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নিজে থেকেই কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো এক কেজি লবণের প্যাকেট করে লবণ বিক্রি করতে দেখা গেছে। সে সময় তার এই উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। অনেকেই তার এই কলাপাতা মোড়ানো লবণের প্যাকেট ও দোকানের ছবি সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যম পোষ্ট করেছেন। তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের ৩ তারিখ থেকে টানা ১৬ থেকে ১৭ দিন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার খড়িবাড়ী বাজারে সর্ব প্রথম ব্যক্তি কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো ১ কেজির লবণের প্যাকেট তৈরি করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। সে সময় কলাপাতায় বিক্রি প্রতিবেদনটি একাধিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন সমসের আলী।
খরিবাড়ী বাজার বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার উদ্যোগটি খুবই ভালো ছিল। কিন্তু তার কলাপাতায় লবণ বিক্রি করার বিষয়টি প্রথম থেকেই বাজারের অন্য ব্যবসায়ী ভালো দৃষ্টিতে নেয়নি। অন্য দিকে কলাপাতায় করে ১৬ থেকে ১৭ দিনেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি। পরে তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীর চাপে কলাপাতায় লবণ বিক্রি ছেড়ে আবারও নিষিদ্ধ পলিথিনে লবণ বিক্রি শুরু করেছেন। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় পলিথিন নিষিদ্ধ করার পরেও বিভিন্ন হাট বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতারা অবাধে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করেই যাচ্ছে।
লবণ ব্যবসায়ী সমসের আলী (৬০) জানান, সেই সময় আমি পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদ দেখে জানতে পারি পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে দেন সরকার। তখন আমি ব্যক্তিগত ভাবে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নিজে উদ্যোগে কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো এক কেজি লবণের প্যাকেট করে বিক্রি করতে শুরু করি। অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। আপনারও আমার কলাপাতায় লবণ বিক্রির বিষয়টি পত্রিকায় তুলেও ধরেছেন আমারও আলো লেগেছে।
আপনি কলাপাতা ছেড়ে আবারও পলিথিনে লবণ বিক্রি করছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, দেখেন ভালো প্রশ্ন করেছেন। আমি টানা ১৬/১৭ দিন কলাপাতায় লবণ বিক্রি করলাম এবংএই খবরটিও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লো। অথবা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কেউয়ে আমার খোঁজ নিলেও না। আপনিও এক দিন এসে ঐ যে গেলেন প্রায় দুই মাস পরে আসলেন। আমিতো টাকা পয়সা চাই না। আমি চেয়েছিলাম কলাপাতায় লবণ বিক্রির বিষয়টি মনিটরিং করার দাবী জানিয়েছি। এক দিকে খোঁজ খবর না নেয়া অন্য দিকের বিষয়টি তিনি না জানালেও অনেকের কাছে জানা গেছে তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীতের কিছুটা চাপের কারণে কলাপাতায় লবণ বিক্রি ছেড়ে দেন।
লবণ ব্যবসায়ী সমসের আলীর বাড়ী ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের নাগদাহ এলাকায়। তিনি খরিবাড়ী বাজার প্রায় ২৫ বছর ধরে খোলা মার্কেটে লবণের দোকান করে করে আসছেন।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম জানান, লবণ ব্যবসায়ী সমসের আলী নিজ উদ্যোগেই কলাপাতায় করে লবণ বিক্রির বিষয়টি আমরা অবগত ছিলাম। এটা ভালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। জানার পরেও ওই লবণ ব্যবসায়ী সমসের আলীর ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখছেন কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, হঠাৎ কেন তিনি কলাপাতায় লবণ বিক্রি ছেড়ে দিয়ে আবারও পলিথিনে লবণ বিক্রি করছেন আমরা দ্রুত সেখানে যাবো এবং সেখানকার বাজার কমিটির সাথে কথা বলে ওই লবণ ব্যবসায়ীকে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করে আবারও কলাপাতায় লবণ বিক্রি করার জন্য তাকে সব ধরণের সহযোগিতার করার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান আমার জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।