Sunday, March 16, 2025
Homeক্যাম্পাসউপাচার্য নিয়োগে ৫ দিনের আলটিমেটাম

উপাচার্য নিয়োগে ৫ দিনের আলটিমেটাম

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ ক্লাস-পরীক্ষা বেতন

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

রংপুর নিউজঃ সরকার পতনের পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, কোষাধ্যক্ষসহ প্রশাসনের ৩৮ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এতে প্রায় দেড় মাস ধরে একাডেমিক, প্রশাসনিকসহ সব কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনও গত মাসের বেতন পাননি। এমনকি ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই অচলাবস্থা কাটছে না।

এদিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে উপাচার্য চেয়ে আলটিমেটাম দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ গেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আলটিমেটাম দেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্য, মেরুদণ্ডসম্পন্ন এবং বিশ্বমানের পাঠ পরিকল্পনার সঙ্গে সংযুক্ত একজনকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া আগামী দিনগুলোতে শিক্ষার গুণগত মান ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি ও প্রত্যাশা করেন তারা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন মোট ৭৬৪ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের কারণে প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনে কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তারা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো পত্র অনুযায়ী ডিনস কমিটির সভায় একজন সিনিয়র শিক্ষককে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। সে অনুযায়ী ডিনস কমিটি ১ সেপ্টেম্বর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোরশেদ হোসেনকে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেয়। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এর বিরোধিতা এবং নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। এ অবস্থায় যোগদানের পরদিন ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন অধ্যাপক মোরশেদ। ফলে নতুন করে কাউকে এই পদের জন্য মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন হয় রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষের স্বাক্ষরে। কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন, আর রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী অসুস্থতা দেখিয়ে ছুটিতে আছেন। ফলে তারা বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নুরুল্লাহ বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য যেতে স্কলারশিপের সব কাগজপত্র তৈরি করে রাখলেও উপাচার্যের দায়িত্বে কেউ না থাকায় তাদের যাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রক্টর না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। হলগুলোতে প্রভোস্ট না থাকায় প্রশাসনিক ব্যবস্থাসহ সব কিছু স্থবির।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ডিনস কমিটি, শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য প্রাথমিকভাবে চার শিক্ষকের নাম এলেও ডিনস কমিটি, শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের পছন্দ-অপছন্দের কারণে কাউকে নিয়োগ দেওয়া যায়নি। ফলে ডিনস কমিটির সভায় মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, ‘এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো নেতা নেই। আবার তারা সবাই নেতা। এক পক্ষ একবার এক সিদ্ধান্ত নিলে আরেক পক্ষ বিরোধিতা করে। ফলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসান হাবিব ও শামসুর রহমান জানান, কোরবানির ঈদে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ক্লাস হয়নি। এরই মধ্যে চলেছে শিক্ষকদের পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলন, তারপর এলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সরকারের পতন। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ফলে আবারও সেশনজটের কবলে পড়তে হবে।

এ বিষয়ে কলা অনুষদের সাবেক ডিন ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘এখন জরুরি ভিত্তিতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং দিন দিন সংকট আরও বাড়বে।’

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর