Saturday, March 29, 2025
Homeকুড়িগ্রামঈদযাত্রায় নৌপথে ডাকাত আতঙ্ক, বাড়তি ভাড়া নিয়ে শঙ্কা

ঈদযাত্রায় নৌপথে ডাকাত আতঙ্ক, বাড়তি ভাড়া নিয়ে শঙ্কা

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

ফয়সাল আহমেদ, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
ঈদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্রহ্মপুত্র নৌপথে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় বাড়িতে ফেরেন হাজারো মানুষ। সড়ক পথের দীর্ঘ যাত্রা ও যানজটের ধকল এড়াতে ঘরমুখো মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে ব্রহ্মপুত্র নৌপথ। যাত্রীদের চাপ সামলাতে ঈদে এই নৌপথে অতিরিক্ত নৌযান যুক্ত হয়। তবে স্বাচ্ছন্দের এই নৌপথে এবার চোখ রাঙাচ্ছে ডাকাত আতঙ্ক। সাথে ঘাট ইজারাদারদের বাড়তি ভাড়া আদায়ের খড়গ ঝুলছে ঘরমুখো যাত্রীদের সামনে।

আসছে ঈদে ব্রহ্মপুত্র যাত্রায় ডাকাতির আশঙ্কা করছেন ঘাট ইজারাদার, নৌকার মাঝি ও যাত্রীরা। একই আশঙ্কা খোদ নৌ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের। নৌপুলিশ সদস্যের ঘাটতি এবং আধুনিক নৌযানের অভাবে ব্রহ্মপুত্র নৌপথে নিরাপত্তা ঝুঁকি দূর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি নৌ পুলিশের। ফলে অনেকটা অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে এই নৌপথ।

এদিকে ঈদ যাত্রায় সিরিয়ালের নৌকার বাইরে চলাচল করা নৌকায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌকা মালিক সমিতি। রৌমারী ঘাটের ৪৮ টি নৌকার মালিকের সমন্বয়ে গঠিত সমিতির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ।

ব্রহ্মপুত্র নৌপথে যাত্রীবাহী নৌকার একাধিক মাঝি ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি ও ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রহ্মপুত্র নৌ পথে পরপর তিনটি নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই দশক পর এমন ডাকাতির ঘটনায় এবারের ঈদ যাত্রায় এই নৌপথে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে দিনে ও রাতে বাড়তি নৌকা চলাচল করবে। ঘরমুখো মানুষের সর্বস্ব লুট করতে এই সময়টাকে ‘সুযোগ’ হিসেবে নিতে পারে ডাকাত দল।

ঢাকা থেকে আসা নৌ যাত্রী সুফিয়া বেগম জানান, কিছু দিন আগে শুনছিলাম নৌকা ডাকাতি হয়েছে। সেই থেকে এই পথে আসতে ভয় হয় কিন্তু কি আর করার এই পথে আমাদের খরচ কম হয়। আমি ফজরের পর নৌকায় উঠছি মাঝ নদীতে আইসা একটু ভয় করছিলো।

নৌকার মাঝি মোসলেম বলেন, গত কয়েকদিন আগে আমার নৌকায় ডাকাতদের হামলা হইছিল। ঈদে যাত্রী বাড়বো। দিনে রাইতে অতিরিক্ত নৌকা চলবো। তখন ডাকাতি হইতে পারে।’

চিলমারী নৌঘাট মাস্টার আবু বক্কর সিদ্দিক খান বলেন, ‘ যেহেতু একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তাই নিরাপত্তা আশঙ্কা আছে। তবে নদীতে নৌ পুলিশের টহল আছে সমস্যা না হওয়ার কথা। তাছাড়া এবার নৌ বন্দর থানা, চিলমারী মডেল থানা, ঢুষমারা থানা সবাই অবগত আছে ডাকাতির ঘটনা ঘটবে না বলে তিনি মনে করেন।

ঈদে বাড়তি ভাড়া আদায় প্রশ্নে ঘাট মাস্টার বলেন, এবার অতিরিক্ত কোনও ভাড়া আদায় হবে না। তবে এর বাইরে যে-সব নৌকা চলবে সেগুলোতে কিছু বাড়তি ভাড়া আদায় হবে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে কথা হয়েছে এবার বাড়তি ভাড়া নেয়ার কোন সুযোগ নেই।

ব্রহ্মপুত্র নদে একে একে তিনটি ডাকাতির ঘটনায় নিরাপত্তা আশঙ্কায় রয়েছে খোদ নৌপুলিশ। মাত্র ৮ জন সদস্য নিয়ে ব্রহ্মপুত্র যাত্রা নিরাপদ করতে হিমশিম খাচ্ছে চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। এ অবস্থায় ব্রহ্মপুত্রে টহল জোরদারে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক নৌযানের দাবি জানিয়েছেন ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি)।

চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, ‘ ফাঁড়িতে মাত্র আট জন সদস্য। এই সংখ্যা যথেষ্ট নয়। ফাঁড়ি পাহারা দিতে অন্তত ৩ জন সদস্য রাখতে হয়। নৌপুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর সাথে আধুনিক জলযান দেওয়া প্রয়োজন।

আইসি আরও বলেন, সামনে ঈদ। এই নৌপথে ঈদযাত্রায় প্রচণ্ড চাপ হয়। সড়ক পথের ধকল এড়াতে বিপুল পরিমাণ নাগরিক এই পথে ঈদযাত্রা করেন। নৌপুলিশের জনবল ও সক্ষমতা না বাড়ালে ঈদে নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়াও জেলা পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন পড়বে।’

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, ঈদ কে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক মহদ্বয়ের সমন্বয়ে, পুলিশ সুপার, স্থানীয় থানা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। নৌ পুলিশের যে ম্যান পাওয়ার কম ছিলো পরে আরো ১৫ জন বাড়তি পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে। ঈদে ব্রহ্মপুত্রে নৌযাত্রা নিরাপদ করতে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘাটে পুলিশের পাহারা থাকবে।

বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে , উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিলো। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট সকলকে বলা আছে বাড়তি ভাড়া নেয়ার কোন সুযোগ নেই।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর