সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাজারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদের দাবিদার দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষার্থীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন তাঁরা দুজনেই। সর্বশেষ গতকাল বুধবার স্কুল চলাকালে শিক্ষার্থীদের হাতে মারধরের শিকার হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রশিদ মিয়া।
এর আগে, গত মঙ্গলবার একইভাবে লাঞ্চিত হন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পদের দাবিদার মো. আবু রায়হান মিয়া। তাঁরা দুজনেই বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
তবে শিক্ষার্থীদের দিয়ে একে-অপরকে লাঞ্চিত করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন গুরুতর আহত দুজনই।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পদের দাবিদার মো. আবু রায়হান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মো. আবদুর রশিদ মিয়াকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ব্যাপারে আমার কোনো হাত নেই। কোনো শিক্ষার্থী এটি বলতে পারবে না। বরং আমাকেই শিক্ষার্থীদের দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন মো. আবদুর রশিদ মিয়া।’
এ বিষয়ে কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রশিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিধি মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। চেয়ারে বসতে গেলেই মো. আবু রায়হান মিয়ার লোকজন ও তাঁর লেলিয়ে দেওয়া শিক্ষার্থী বাঁধা দেন আমাকে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে যাই এবং শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার চেষ্টা করি। এতে বাধা দেন মো. আবু রায়হান মিয়ার লোকজন ও তাঁর পক্ষের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের নিষেধ উপেক্ষা করে স্বাক্ষর করার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী রড দিয়ে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে স্থানীয় ও স্বজনরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান আমাকে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মো. আবু রায়হান মিয়াকে মারধর করতে আমি কোনো শিক্ষার্থীকে ইন্ধন দেইনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেন, ‘সবাই নয়। কিছু উশৃংখল শিক্ষার্থী স্যারদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন। আমরা তাদের শাস্তির দাবি করছি।’
এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুইদিন আগে আমি এখানে এসেছি। বিষয়টি জানা নেই আমার। তবে মারামারির বিষয়টি শুনেছি। শিক্ষার্থীদের দিয়ে মারামারি করানো অত্যন্ত দুঃখজনক।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের দাবিদার ২ শিক্ষককে তাঁদের কাগজপত্রসহ ২৬ সেপ্টেম্বর দেখা করতে বলেছি। এরপর বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
উল্লেখ্য, বাজারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আলতাফ হোসেন তাঁর শেষ কর্মদিবস ১১ সেপ্টেম্বরে বিধি ভেঙে সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদকে দায়িত্ব না দিয়ে সহকারী শিক্ষক আবু রায়হান মিয়াকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
এর আগে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করেন প্রধান শিক্ষক। পরে সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ উচ্চ আদালত ও শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করেন। উচ্চ আদালত ও শিক্ষাবোর্ড তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক স্বপদে বহাল করেন। শেষে আবদুর রশিদ আদেশের কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দাখিল করলে গত ২২ সেপ্টেম্বর তাঁকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেন ইউএনও। এ নিয়েই দ্বন্দ্ব দুই শিক্ষকের মধ্যে। বর্তমানে কোনো কমিটি নেই ওই বিদ্যালয়ে।