অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
দেশের উত্তরের সীমান্তঘেষা জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক সময়ের খরস্রোতা ধরলা-বারোমাসিয়া নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদী শুকিয়ে এখন সবুজ ফসলের মাঠ পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর চরে জেগে ওঠা পলিমাটিতে বাম্পার ফলন উৎপাদন করছে। কেউ কেউ রোপনকৃত ফসলগুলোর বাম্পার ফলন হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
এসব নদ-নদীর বুকে তীরবর্তী চাষিরা টানা দেড় যুগ ধরে বোরো ধান, ভুট্টা, বাদাম, কলা, মরিচ, বেগুন, টমেটো, বাঁধা -কপি, সরিষা, আলু করলাসহ নানা মূখী ফসলের চাষাবাদ করে আসছেন। নদীতে পানির ধারণক্ষমতা না থাকায় বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিপাতে বন্যা হয়ে যায়। ফলে বছরে দুই বার চাষবাদ করা গেলেও এখন আবহাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিন-চার ফসল ফলাতে পারছে কৃষক। এতে করে বর্ষা কাটিয়ে খরা মৌসুমের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষক।
বয়োবৃদ্ধরা জানান, এক থেকে দেড় যুগ আগেও পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন ছিল ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে। এই দুই নদীর প্রবল স্রোতের কারণে আঁতকে উঠতো নদী পাড়ের হাজারও বাসিন্দা। এখন পানি না থাকায় ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে ছোট বড় প্রায় দুই থেকে আড়াই শতাধিক চরের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার সময় দুই-তিন মাস বাদে বছরের বাকিটা সময় নদীর বুক চিরে পুরোদমে চলছে চাষাবাদ। সীমান্তঘেঁষা এই নদী দুইটি এখন অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র আয়ের প্রধান উৎস। নদী শুকিয়ে যাওয়া এখন জীবন-জীবিকায় কৃষি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
এ দিকে ধরলা ও বারোমাসিয়ার বুকে চাষাবাদ করে কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলেও নদীতে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারী জেলে পরিবারগুলো কঠিন দুশ্চিন্তায় পরেছেন। এক সময় ধরলা ও বারোমাসিয়াসহ বিভিন্ন নদনদীতে নানান প্রজাতির মাছ শিকার করে তারা জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। পানি প্রবাহ না থাকায় এসব মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। ফলে এখানকার জেলে পরিবাররা পেশা হারিয়ে অনেকেই দিনমজুর, রিতশাচালক, মালিসহ নানা বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হলেও কিছু জেলে পরিবার নদীতে মাছ শিকার করতে না পেরে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন।
ধরলা পাড়ের সোনাইকাজী এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হক ও শফিকুল ইসলাম জানান, এক সময় এই ধরলা নদীই আমাদের ঘর-বাড়ি, আবাদি জমি-জমাসহ সব কিছুই গিলে নিয়েছে। সেই ধরলা এখন শুকিয়েছে। অনেকেই ধরলার আগ্রাসী রূপ দেখেছে। ধরলার তীব্র ভাঙনে অনেকেই নি:স্ব হয়েছেন। এখন আমরা প্রতি বছর ধরলার বুকে জেগে উঠা পলিমাটিতে ৪ থেকে বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করছি। এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন দেখা দিয়েছে। আশাকরছি গত বছরের মতো এ বছরও প্রতি বিঘায় ২৮ থেকে ৩০ মন ধান ঘরে তুলতে পারবো।
একই এলাকার কৃষক কৃষক মজসেদ আলী ও মোন্নাফ আলী জানান, কমপক্ষে ৮-১০ বছর ধরে ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর বুকে বোরো এবং ভুট্টার চাষাবাদ করছি। প্রতি বছরেই বোরো ও ভুট্টার ভাল ফলন হয়ে আসছে। আশা করছি এবছরও ভাল ফলন হবে। তারা আরও জানান, প্রত্যেকেই তিন বিঘা বোরো ও দুই বিঘা ভুট্টা চাষ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। তবে এ বছর খরচটা অনেক বেশি হয়েছে। ধান ও ভুট্টার দাম ভাল না থাকলে আমাদের চাষিদের লোকসান গুনতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর। অর্জন হয়েছে ১০ হাজার ২০৫।এর মধ্যে ধরলা-বারোমাসিয়া নদীর অববাহিকায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৫ হেক্টর। সেই সাথে এ উপজেলায় ২ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ হয়েছে এবং ধরলা-বারোমাসিয়া নদীর বুুকে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ হয়েছে। ভুট্টা কর্তন চলমান রয়েছে। গত বছরের ন্যায় এ বছর বোরো ও ভুট্টার ফলন ভালোই দেখা যাচ্ছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূল থাকলে কৃষকরা বাম্পার ফলন পাবে এবং দামেও ভাল পাবে।