Sunday, March 16, 2025
Homeকুড়িগ্রামকুড়িগ্রামে যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা: আবারও আসামি দুই সাংবাদিক, অভিযোগ চুরি ও...

কুড়িগ্রামে যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা: আবারও আসামি দুই সাংবাদিক, অভিযোগ চুরি ও লুটপাট!

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রাম জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলাল সহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০/৩৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা ও লুটপাটের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় জেলায় কর্মরত দুই সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আসামি দুই সাংবাদিক হলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, দৈনিক কালের কন্ঠের জেলা প্রতিনিধি ও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ফারুক এবং নিউজ টুয়েন্টি ফোর টেলিভিশন, দৈনিক সংবাদের জেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির সূর্য। তাদের বিরুদ্ধে দোকানের মালামাল চুরি ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে যুবলীগ নেতাকর্মীদের সাথে দুই সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হলেও তাদের পরিচয় সাংবাদিক উল্লেখ করা হয়নি। তাদের আব্দুল খালেক ফারুককে যুবলীগ সদস্য এবং হুমায়ুন কবির সূর্যকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তবে ওই দুই সাংবাদিকের সাংগঠনিক পরিচয়ের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে এর কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদীর নাম মাহফুজার রহমান। তিনি জেলার রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের বালাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কয়েক বছর আগে কুড়িগ্রাম শহরের জেলা পরিষদ মার্কেটে ‘চুলা ঘর’ নামে প্রতিষ্ঠান চালু করে ব্যবসা করতেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা সবাই ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের’ দলীয় লোকজন। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর বিকালে যুবলীগ আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালের নেতৃত্বে আসামিরা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে জেলা পরিষদ মার্কেটে বাদীর দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করে। এসময় আসামিদের কয়েকজন তাকে মারপিট করে। রশি দিয়ে বেঁধে পিটুনি দেয়। তার পকেট থেকে এক লক্ষ টাকা তুলে নেয়। এছাড়াও আসামিরা যুবলীগের আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালের নির্দেশে দোকানে লুটপাট চালায়। এসময় আসামিরা তার দোকানে থাকা গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার সহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে কোথাও নালিশ করতে বারণ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
মামলায় লুটপাটের পরিমাণ ২৩ লক্ষ টাকা এবং দোকানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও ৩ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদী মাহফুজার রহমান দাবি করেছেন অন্য আসামিদের সাথে খালেক ফারুক ও হুমাউন কবির সূর্য ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ উপস্থিত না থাকলে আসামি হবে কেন! এ নিয়ে আপনার সাথে বসে কথা বলবো।’ জড়িত না থাকলেও দুই সাংবাদিকের সাংগঠনিক পরিচয় উল্লেখ করা প্রশ্নে কোনও সদুত্তর দেননি তিনি।
মামলার বিষয়ে জানতে যুবলীগের আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। জেলা যুবলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক আব্দুল খালেক ফারুক যুবলীগের কোনও পর্যায়ে যুক্ত নন, কখনও যুক্ত ছিলেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বর্তমানে কোনও কার্যক্রম নেই। দেড় বছর আগে কমিটি ও কার্যক্রম বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনটির সাবেক একাধিক দায়িত্বশীলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সদস্যপদ তো দূরের কথা, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির সূর্য কখনই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাথে যুক্ত ছিলেন না।
সাংবাদিক আব্দুল খালেক ফারুক বলেন, ‘দেশের প্রথম সারির একাধিক মিডিয়ায় কাজ করি, রাজনীতির সঙ্গে কোনভাবে সম্পৃক্ত নই। কারা কী উদ্দেশ্যে মামলা দিচ্ছে জানিনা। তবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করাই লক্ষ্য বলে মনে হয়।’
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ বলেন,‘যে অভিযোগ তুলে দুই সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে তার সাথে তাদের দূরতম সম্পর্ক নেই। তারা পেশাদার সাংবাদিক। শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশে এই মামলা। সাংবাদিকদের এভাবে আসামি করায় পেশাদার সাংবাদিকরা আতঙ্কে রয়েছেন।’
ওসি মো.হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।’
প্রসঙ্গত, এর আগে কুড়িগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে করা মামলায় কুড়িগ্রামের তিন সাংবাদিক আব্দুল খালেক ফারুক, হুমাউন কবির সূর্য ও ইউসুফ আলমগীরকে আসামি করা হয়।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর