এ কে এম কায়সারুল আলম, প্রতিনিধিঃ
জামায়াতে ইসলামির আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাদের স্বাধীনতাকে আমরা সম্মান করি। আমরা তাদের নিয়ে সম্মান, শ্রদ্ধা আর সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে চাই। আমরা ভালো না থাকলে তারা ভালো থাকবে কি না, সেটা তাদের ভাবতে হবে।’
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট শহরের কালেক্টরেট মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের দেশে প্রবেশ করে লালমনিরহাটের ছেলে, ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করা হাসিনুরকে ধরে বুকের ওপর পা দিয়ে গুলি করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন, হাসিনুর কি মানুষ না? তারা কি মানুষ না? মানুষ হয়ে মানুষকে বুকের ওপর পা দিয়ে গুলি করে কীভাবে হত্যা করে?
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। আমরা নির্বাচন চাই। তবে পেশিশক্তি, কালোটাকামুক্ত প্লেন (সমতল) মাঠের সুষ্ঠু নির্বাচন। নির্বাচনের আগেই খুনিদের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া পেশিশক্তির নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের বিদায়ের পর আমরা ১৫ দিন মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মঠ পাহারা দিয়েছি। আমরা এমন রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই, যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান পাহারা দিতে না হয়। সংখ্যালঘু নয়, নিরাপত্তা সবাইকে দেওয়া হবে।
আমরা ওয়ারেন্টি দিচ্ছি, দেশের প্রতিটি মানুষ নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বাঁচবে। আমরা আল্লাহকে ভয় করি। যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারা কখনোই অন্যের সম্পদ, সম্মান ও ইজ্জত নষ্ট করে না। আমরা সৎ লোকের ও কোরআনের শাসনে বাংলাদেশকে বদলে দিতে চাই। এতে আপনাদের পাশে চাই, আপনাদের বুকে একটু ঠাঁই চাই।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে জামায়াতের শীর্ষ এ নেতা বলেন, ফ্যাসিস্টরা জনগণের অধিকার ও কর্মসংস্থান কেড়ে নিয়েছিল। গুম, খুন ও আয়নাঘরে বন্দী করে জনগণের কণ্ঠরোধ করেছিল। জনগণের আন্দোলনে তারা শুধু গদিই ছাড়েনি, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সহকর্মীদের পর্যন্ত বলে যেতে পারেনি। যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না, দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে বেগমপাড়া বানায় না। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ রক্ষা পায়নি, পাবেও না।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত ৫৪ বছরের সরকারগুলো নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান-মর্যাদা দিতে পারেনি। অনেকেই বলে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা চাকরি করতে পারবে না, যা ভুল ধারণা। আমরা আগে নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান-মর্যাদা নিশ্চিত করে নিরাপদ কর্মস্থল গড়ে তুলব। আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলবে, কেউ তার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পর্যন্ত পাবে না।’
শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীদের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। এখনো সড়ক, কারখানাসহ সর্বত্রই চাঁদাবাজ আর দখলবাজদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। এ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করেছেন। এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’
দুর্নীতি প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে তারা সন্তোষজনক ভাতা নিয়ে সম্মানের সঙ্গে মানুষের সেবা করতে পারে, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে বাধ্য করেছে রাষ্ট্রযন্ত্র। ১৩ হাজার টাকা বেতন পাওয়া কর্মচারীকে বাসাভাড়া যদি ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়, তাহলে সেই কর্মচারী কী করবে? আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে।’
লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের আমির আবু তাহের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, জেলা সেক্রেটারি ফিরোজ হায়দার লাভলু, হাতীবান্ধা উপজেলা হিন্দুকল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি পুষ্পজিৎ রায় প্রমুখ।
জামায়াতের আমির পরে বিএসএফের গুলিতে নিহত হাতীবান্ধার যুবক হাসিনুরের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি ভুক্তভোগী পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে নীলফামারীর উদ্দেশে রওনা দেন।