জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. আশরাফুল ইসলাম এনডিসি, পিএসসি সফলভাবে তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে যাচ্ছেন। রোববার (২০ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে তাকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৪ জুলাই আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। তার দায়িত্ব পালনকালে ১৮৪ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। এ সময় ১৬৮টি চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে ১০২.৯২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল।
চা শিল্পকে টেকসই ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর উদ্দেশ্যে এবং চা উৎপাদনকারীদের সুরক্ষা প্রদানের নিমিত্তে চায়ের গ্রেড ভিত্তিক ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয় তার সময়ে। যার উপর ভিত্তি করে এখন চা নিলাম পরিচালিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ চা বোর্ড এর নতুন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ সরওয়ার হোসেন
তিনি টি লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু করেন। চায়ের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ ও রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে “উন্নয়নের পথ নকশা: বাংলাদেশের চা শিল্প ” এর মধ্যমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন কার্যক্রম চালু করেন।

চা শিল্পে স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চা চোরাচালান রোধ ও সঠিক তথ্য প্রাপ্তির নিমিত্তে প্রথমবারের মতো টি সফট নামে একটি সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। এ সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে চা চোরাচালান রোধ এবং চা উৎপাদনের সঠিক তথ্য প্রাপ্তি সহজ হয়েছে। পাশাপাশি সব চা বাগানের তথ্য একই প্লাটফর্মে প্রাপ্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রি শীর্ষক আরও একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে।
চা বোর্ড থেকে বিদায়ের আগে বাংলাদেশ চা বোর্ডের সবাই মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম-এনডিসি,পিএসসি মহাদয়কে যথার্থ মর্যদায় ও জাঁকজমকভাবে শনিবার বিদায় অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বিদায় জানান।
মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম-এনডিসি,পিএসসি ১৯৬৮ সালের ২১ অক্টোবর বর্তমান লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার তিস্তা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৮৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ২১তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে ইঞ্জিনিয়ার্স কোর এ কমিশন লাভ করেন এবং ৫ আরই ব্যাটালিয়ন, পোস্তগোলা সেনানিবাসে যোগদান করেন। দীর্ঘ পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমাত্রিক কমান্ড, স্টাফ এবং প্রশিক্ষক নিযুক্তিতে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উপরন্তু, তিনি অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে টেকসই উন্নয়নে (এসডি) এমএসএস এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিরক্ষা স্টাডিজে মাস্টার্স করেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে, তিনি ভারতের মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইঞ্জিনিয়ার অফিসার সার্ভে কোর্স সম্পন্ন করেছেন এবং ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া এবং সুদান-দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি অসংখ্য আন্তর্জাতিক পরিদর্শন, ব্রিফিং, সেমিনার, কর্মশালা এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন।
একজন আগ্রহী ভ্রমণকারী, তিনি ভারত, দুবাই, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, ইতালি, সুদান, সৌদি আরব, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, মিশর, চীন, সিঙ্গাপুর, স্পেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া সহ দেশগুলি সফর করেছেন। যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, তুরস্ক এবং রুয়ান্ডা। তার স্ত্রী, তাহমিনা ইসলাম, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষিকা, এবং তাদের একসাথে তিনটি মেয়ে রয়েছে।